টক ঢেকুর বা বুক জ্বালাপোড়া করলে যা করবেন
পেট পুরে খাবার খাওয়ার পর সবাই শরীর-মনে প্রশান্তির প্রত্যাশা করেন। কিন্তু কারও কারও ক্ষেত্রে খাওয়ার পরই বাধে বিপত্তি। খাবার খাওয়ার পরই অনেকের গলা বেয়ে উঠে আসে টক ঢেকুর, শুরু হয় গলা জ্বলা বা অস্বস্তি। কারও কারও বুকের মধ্যখানে হতে পারে জ্বলুনি বা ব্যথা। কখনো আরও নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অস্বস্তিকর কাশি, রাতে ঘুমানোর সময় গলা খুসখুস, শ্বাসকষ্ট, প্রচণ্ড কাশি ইত্যাদি সমস্যা নিয়েও অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে ছোটেন।
সাধারণত খাবার খেলে তা আমাদের খাদ্যনালি হয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছায়। খাদ্যনালির একেবারে শেষ মাথায় থাকে একখানা দরজা, যাকে বলা হয় 'লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটার'। এর কাজ হচ্ছে খাবার যেন ওপরের দিকে না ওঠে বা পেছন দিকে না যায়, তা রোধ করা। এই লোয়ার ইসোফেজিয়াল স্ফিংটারের পেশিগুলো দুর্বল হলে বা কাজ কমিয়ে দিলে আধা হজম হওয়া খাবারগুলো পাকস্থলীর অ্যাসিডসহ রওনা দেয় উল্টো দিকে বা খাদ্যনালির দিকে। ফলে টক ঢেকুর, বুকজ্বালা বা ব্যথাসহ আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
কিছু কিছু কারণ এ সমস্যার জন্য দায়ী। যেমন স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন, গর্ভাবস্থা, হায়াটাল হার্নিয়া, এর সঙ্গে বিরল কিছু রোগ (যেমন স্ক্লেরোডারমা)। আবার অ্যালকোহল, ক্যাফেইন ইত্যাদির সঙ্গেও সম্পর্ক রয়েছে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা জিইআরডির। ভারী খাবার বা চর্বিজাতীয় খাবার খেলেও এই উপসর্গ বাড়তে পারে। খুব আঁটসাঁট পোশাক পরলেও হতে পারে বিপত্তি।
এ সমস্যা শনাক্ত করার জন্য অনেক সময় রোগ লক্ষণই যথেষ্ট। তবে কখনো কখনো এন্ডোস্কপি পরীক্ষার দরকার হতে পারে। কখনো কখনো খাদ্যনালির স্ফিংটারের কার্যকারিতা দেখার জন্য বা অ্যাসিডের মাত্রা দেখার জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। জিইআরডিতে শুধু যে শারীরিক অস্বস্তি হয় তা নয়, দীর্ঘদিন ধরে এমনটি চলতে থাকলে পরিপাকতন্ত্রের নানান জটিলতা হতে পারে। হতে পারে খাদ্যনালির আলসার, খাদ্যনালি সরু হয়ে যাওয়া, এমনকি দীর্ঘদিন পাকস্থলীর অম্লরস খাদ্যনালির স্থায়ী পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্যানসার–পূর্ববর্তী অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ফলে পরবর্তী সময়ে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। অতএব জিইআরডি শুধু বুক জ্বালাপোড়া বা টক ঢেকুরের সমস্যা নয়, বরং অনেক জটিলতার কারণ। তাই এর চিকিৎসাও করা প্রয়োজন গুরুত্বসহকারে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
একসঙ্গে খুব ভরপেট খাবেন না।
খেয়েই শুয়ে পড়া উচিত নয়।
খাবার পর পেটের ওপর চাপ পড়ে, এমন কাজ করা উচিত নয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
ধূমপান বা মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
অতিরিক্ত তেল–চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
কিছু ওষুধ পাকস্থলীর অ্যাসিড ক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে বা অ্যান্টাসিড–জাতীয় ওষুধ অ্যাসিড উপশমে সহায়তা করতে পারে। কখনো কখনো ওষুধে কাজ না দিলে অপারেশনেরও প্রয়োজন হতে পারে। তবে সঠিক কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেক সময়ই জিইআরডির সমস্যা কমানো যায়।