গাজা দখলের পথে ইসরায়েল, হামাস কী করবে?

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ সামরিক হামলা শুরু হওয়ার পর এখন বোঝা যাচ্ছে দেশটি এ অঞ্চলে আরও সম্প্রসারণে উদ্যোগী। ২০০৭ সাল থেকে হামাস এই এলাকাটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। কিন্তু এখন সামরিক এবং রাজনৈতিক, দু'দিক থেকেই সংকুচিত হয়েছে তার অবস্থান।
ইসরায়েলের সামরিক আভিযানের লক্ষ্য কেবল মানুষ হত্যা নয়, রয়েছে আরও বড় কৌশল। হামাসের সেই অক্টোবর ৭ এর হামলার পর এখন ইসরায়েলের লক্ষ্য গাজা পুরোপুরি দখলে নেওয়া এবং জোরপূর্বক সেখানকার অধিবাসীদের সরিয়ে দেওয়া।
হামাসের জন্য পরিস্থিতি একেবারেই সঙ্গিন, কারণ তার পক্ষে থাকা লেবাননের হেজবুল্লাহ এবং ইরান নিজেরাই ভুরাজনৈতিক চাপে পড়ে অনেকটা বেসামাল। এমনকি ইরান সমর্থিত ইয়েমনের হুতি গোষ্ঠীও ওয়াশিংটনের চাপে লোহিত সাগর অঞ্চলে সুবিধা করতে পারছে না। ফলে এ অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য বড়ভাবেই ইসরায়েলের পক্ষে চলে গেছে।
অভ্যন্তরীণভাবেও হামাস সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। ফিলিস্তিনের সাধারণ জনগণ প্রতিবাদে নেমেছে, তারা চায় হামাস যুদ্ধ শেষ করুক এবং যেসব এলাকা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে সেগুলো ছেড়ে দিক। অবস্থার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েলও। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ এই প্রতিবাদে সামিল হতে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের আহবান জানিয়েছেন।
কিন্তু এত চাপের পরও হামাসের জন্য কিছু জায়গা আছে বলে মনে করেন ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক উইসাম আফিফা। তার মতে হামাসের হাতে যারা বন্দী আছে তাদেরকে কেন্দ্র করে হামাস ইসরায়েলের উপর এখনও চাপ অব্যাহত রাখতে পেরেছে। হামাসের সাথে পুরোপুরি না পেরে নেতানইয়াহু সরকার নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেও এই সামরিক হামলায় গিয়েছে।
হামাসের হাতে এখনও ৫৯ জন বন্দী আছে এবং অক্টোবরের সেই হামলার পর এখন পর্যন্ত ১৪৭ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আফিফা মনে করেন, এটি একটি শক্তিশালী কার্ড হামাসের জন্য তবে এই কার্ড কীভাবে প্রয়োগ করে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করে দরকষাকষির টেবিলে আনা হবে তা পরিষ্কার নয়।
অনেকগুলো অপশনের মধ্যে একটি হলো গাজার রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিতে হবে হামাকে। এই এলাকার শাসন ব্যবস্থা একটি নিরপেক্ষ কর্তৃপক্ষের হাতে দিতে হবে। হতে পারে সেটা মিশর বা আরব লীগ যারা পরবর্তীতে ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে।
আফিফার মতে এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলকে বাধ্য করতে পারে সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করতে। তবে সমস্যা হলো ১৯৮২ সালে বৈরুত থেকে পিএলও যেভাবে নিজেকে সরিয়ে এনেছিল সেটা হামাসের বেলায় নাও ঘটতে পারে। কারণ হামাস কোন বিদেশি মাটিতে অপারেশন পরিচালনা করছে না। ফিলিস্তিন তার দেশ, গাজা তার জন্মভিটা।
আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক থায়ের আবু আতিউই মনে করেন হামাসকে আরব দেশগুলো থেকে আসা শান্তি প্রস্তাব গ্রহণ করতেই হবে। এতে করে মিশর, কাতার এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোকে সুযোগ করে দিবে কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণের।
তার মতে হামাসকে দায়িত্বশীলতার পাশাপামি প্রজ্ঞারও পরিচয় দিতে হবে। নিজেকে বাঁচাতে হবে, গাজা অঞ্চল ও তার মানুষকেও বাঁচাতে হবে। আরব দেশগুলোর সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে বন্দী বিনিময় করে যুদ্ধ থামাতে হবে।
Comments