সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে বিএনপি যে স্প্রেডশিট পেয়েছে, তাতে ৭০টির মতো প্রস্তাব উল্লেখ করা হলেও মূল প্রতিবেদনে সুপারিশ সংখ্যা প্রায় ১২৩টির মতো।
শনিবার (২২ মার্চ) রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একইভাবে নির্বাচনি ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মূল প্রতিবেদনে ১৫০টির মতো সুপারিশ তুলে ধরা হলেও স্প্রেডশিটে মাত্র ২৭টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে অধিকাংশই সংবিধান সংস্কারের সাথে সংশ্লিষ্ট। 'তাই আমরা মনে করছি, স্প্রেডশিটের সঙ্গে মূল সুপারিশমালার ওপর আমাদের মতামত সংযুক্ত করে দিলে বিভ্রান্তি এড়ানো যাবে।'
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক প্রেরিত স্প্রেডশিটে যে অপশন/পছন্দগুলোর ঘরে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছে তাতে একটি বিষয় প্রতিভাত হয়েছে যে, যে বিষয়গুলো প্রস্তবাকারে আসতে পারতো তা প্রস্তাব না রেখে 'হ্যাঁ', 'না' উত্তর দিতে বলা হয়েছে। যেমন, প্রস্তাবগুলো গণপরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চাই কি না? হ্যাঁ অথবা না বলুন। কিন্তু প্রথমে সিদ্ধান্ত আসতে হবে যে, গণপরিষদের প্রস্তাবে আমরা একমত কি না? একইভাবে 'গণভোট', 'গণপরিষদ এবং আইনসভা' হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন চাই কি না ইত্যাদি হ্যাঁ-না বলুন।
তিনি বলেন, সুপারিশসমূহ পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, এতে ভবিষ্যতে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে নিয়োগের অযৌক্তিক প্রচেষ্টা রয়েছে যা অনভিপ্রেত।
সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কার ও নির্বাচনি প্রক্রিয়া দুটোই একইসঙ্গে চলতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সংস্কার সনদ তৈরি হতেই পারে, নির্বাচিত সরকার পরবর্তীতে যা বাস্তবায়ন করবে। এমতাবস্থায় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত করণীয় হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা এবং নির্বাচিত সরকারের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি আগামীকালের (২৩ মার্চ) মধ্যে এই বিষয়ে তাদের মতামত জমা দিতে পারে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সেলিমা রহমান ও সালেহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন পাঁচ সংস্কার কমিশনের মূল সুপারিশের ওপর ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত চায়।
কমিশন ১৬৬টি সুপারিশ প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাংবিধানিক সংস্কারের ওপর ৭০টি, নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের ওপর ২৭টি, বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা সংস্কারের ওপর ২৩টি, জনপ্রশাসন সংস্কারের ওপর ২৬টি এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারের ওপর ২০টি সুপারিশ রয়েছে।
Comments