স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে বেলুচিস্তান?

স্বাধীনতার কাছাকাছি বালুচিস্তান। ১৯৭১ সালে যেভাবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলো সেরকম এক অবস্থার মুখোমুখি বালুচিস্তান। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিষয়টি স্বীকার না করছে না এবং মার্কিন প্রশাসনকেও প্রকৃত অবস্থা জানতে দিচ্ছে না। দেশ বিদেশে আইএসআই প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সব মহলকে প্রকৃত অবস্থা থেকে দূরে রাখছে।
পরাশক্তি হওয়া সত্বেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বালুচিস্তানের বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের দেয়া এক তরফা তথ্য বিশ্বাস করে চলেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পও জানেন না স্বাধীনতার পক্ষে বালুচ জনগণের মনোভাব এখন কতটা শক্ত। আইএসআই পশ্চিমা গণমাধ্যম, তাদের সুশীল সমাজ, রাজনীতিক এবং ব্যবসায়ী মহলকে আসল তথ্য দিচ্ছে না।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার কাজই হলো নিজ দেশের জনগণ এবং বিশ্ববাসীর নজর থেকে সত্য লুকিয়ে রাখা যেমনটা তারা করেছিল ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়। ১৯৭১ সালে যুদ্ধে হেরে গিয়ে আত্মসমর্পণের সময়ও পাকিস্তান বাহিনী জনগণকে জানিয়েছিল তারা পূর্ব পাকিস্তানে বিজয় অর্জন করেছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য ছিল ৯৩,০০০ সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পন করেছিলেন পাকিস্তানের কমান্ডার জেনারেল নিয়াজি। আধুনিক কোন যুদ্ধের ইতিহাসে এত সৈন্যের এক সাথে আত্মসমর্পণ এক বিরল ঘটনা।
তবে এখন অনেক মানুষই বুঝতে শুরু করেছে যে, পাকিস্তান সরকার মিথ্যা বলে। এমনকি সরকারের চরমপন্থী সহযোগী জমিয়ত উলেমা-ই-ইসলামের প্রধান মাওলানা ফজল-উর-রেহমান খোলাখুলিই বলছেন যে, বালুচিস্তানে পাকিস্তান সরকার এবং আইএসআই-এর নিয়ন্ত্রণ আলগা হয়ে গেছে। সম্প্রতি পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলিতে বক্তৃতা করার সময় মাওলানা ফজল বলেন, 'আমি আন্তর থেকেই বলছি, বালুচিস্তানের পাঁচ থেকে সাতটি গ্রুপ আছে, তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতি আক্রমণ শুরু করলে দেশ আবার ভাঙবে, ওরা স্বাধীন হবে"।
মাওলানা ফজল-উর-রেহমান বরাবরই সেনাবাহিনীকে সমর্থন করা ব্যক্তি। সেই তিনিই তথ্য দিচ্ছেন যে, বালুচ জনগণ স্বাধীন হতে শুরু করেছে যা পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য ভালো নয়। তার মতে বালুচ জেলাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে শুরু করলে জাতিসংঘ সেটা মেনে নেবে যা প্রকারান্তরে পাকিস্তানের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে।
পাকিস্তানের কূটনীতিক, আইএসআই-এর তথ্যের ওপর নির্ভর না করে ট্রাম্প প্রশাসনের উচিত বৈধ বালুচ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। বিশেষ করে ফ্রি বালুচিস্তান মুভমেন্ট (এফবিএম)-এর প্রেসিডেন্ট হিরবিয়ার মারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে আসল তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। এই এফবিএম বালুচিস্তানের নেত্রীস্থানীয় ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দল যার নেতা কর্মীরা সাত দশক ধরে পাকিস্তান ও ইরানের কবল থেকে বালুচিস্তানকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছে।
পাকিস্তানের মতো একটি ধর্মভিত্তিক ব্যর্থ রাষ্ট্র ছেড়ে র্দীর্ঘ মেয়াদী নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বিবেচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে বালুচিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলা, কারণ এটি হবে খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধশালী একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
এফবিএম জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিরবতা ভেঙ্গে, পরিস্থিতির গভীরতা বুঝে বালুচিস্তানের বাস্তবতা অনুধাবন করা। এমনকি বালুচিস্তানের বাইরের রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ধর্মীয় নেতারাও বলছেন যে, বালুচিস্তানের স্বাধীনতা বেশি দূরে নয়। এখানে আরও বেশি মানবিক বিপর্যয়ের আগেই জাতিসংঘের উচিত হবে হস্তক্ষেপ করা।
স্বাধীন বালুচিস্তানই আঞ্চলিত স্থিতিশীলতা ও শান্তির নিশ্চয়তা। স্বাধীন বালুচিস্তানই হবে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর উগ্র আচরণ থেকে এই অঞ্চলকে নিরাপদ রাখার বড় পদক্ষেপ। যদি ২০০২ সালের পূর্ব তিমুর, ১৯৯৯ সালের কসোভো, ২০১১ সালের সাউথ সুদান, ১৯৯০ সালের নামিবিয়া এবং ১৯৯৩ সালের ইরিত্রিয়ার দিকে নজর দেয়া যায় তাহলে জাতিসংঘ বুঝতে পারবে বালুচিস্তানেও জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশন শুরু করা। কারণ পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এই জনপদকে যুদ্ধাঞ্চলে পরিণত করেছে। এখান থেকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারই সমাধান এবং সেটা হতে পারে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের মাধ্যমে।
https://www.memri.org/ থেকে অনুদিত
লেখক: রূদম আজাদ, বালুচ মানবাধিকার কর্মী ও সাহিত্যিক
Comments