খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শেষ, বুধবার রায়
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দশ বছরের সাজা বহাল থাকবে কি না তা জানা যাবে বুধবার।
এই মামলার খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ রায়ের জন্য এই দিন ঠিক করেছেন।
রায়ে খালেদা জিয়াসহ বাকি আসামিরা ন্যায়বিচার পাবেন বলে প্রত্যাশা করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
সকালে আদালতের শুনানি শেষে তিনি বলেন, "তৎকালীন রেজিমের যে আদালত ছিল, সে আদালতের কিছু কিছু বিচারক একটা রাজনৈতিক স্কিমের অংশ হিসাবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন। তখন ২০১৮ সালের পার্লামেন্ট ইলেকশন, সে ইলেকশনে যেন খালেদা জিয়া পার্টিসিপেট করতে না পারেন সেজন্য, মহামান্য আপিলিয়েট ডিভিশন থেকে হাইকোর্ট ডিভিশনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল চার মাসের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তির জন্য। যা শুধু বাংলাদেশ নয় পাক-ভারত উপমহাদেশে বিরল দৃষ্টান্ত।
"জিয়া পরিবারকে ভিক্টিম করার জন্যই ম্যালিসিয়াশলি এ মামলা দায়ের করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত জিঘাংসা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে মামলা দায়ের করা হয়েছিল।"
খালেদা জিয়াসহ আসামিদের আপিলের ওপর এদিন চতুর্থ দিনের মত শুনানি শেষে রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হল।
এর আগের কয়েকদিনের শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলে এসেছেন, এ মামলায় খালেদা জিয়ার কোনো 'সংশ্লিষ্টতাই ছিল না'। কেবল 'রাজনৈতিক কারণে' তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের আসামি করা হয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল গত বছরের ১১ নভেম্বর।
তা মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে খালেদা জিয়াকে দেওয়া ১০ বছরের সাজা স্থগিত করা হয়। খালেদা জিয়াকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ দাখিল করার নির্দেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে কারা অধিদপ্তরের প্যারেড গ্রাউন্ডে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন।
একইসঙ্গে তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
ওই বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। পরে খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে দুদকও হাই কোর্টে আবেদন করে।
দুই আবেদনের শুনানি করে ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ খালেদা আসামিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। আর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করে।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে ২০১৯ সালের ১৪ মার্চ আপিল বিভাগে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। সরকার পরিবর্তনের পর সেই আবেদনের ওপর শুনানি শেষে গত বছরের ১০ নভেম্বর আপিল বিভাগ তার সাজা স্থগিত করে আপিলের অনুমতি দেয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক হারুন অর রশিদ।
২০০৯ সালের গত ৫ অগাস্ট খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মোমিনুর রহমান, সাবেক সাংসদ কাজী সলিমুল হক কামাল, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব কামালউদ্দিন সিদ্দিকী ও সরফুদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
একই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত।