খাবারে লেবু-শসা-পেঁয়াজ রাখলে কী সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে?

আশপাশে তাকালেই কম-বেশি ডায়াবেটিসের রোগী দেখা যায়। এমনকি অনেকের নিজের পরিবারের মধ্যেই রয়েছে। ডায়াবেটিস হলে কী খাওয়া যাবে, কী যাবে না, তা নিয়ে ভাবনার শেষ থাকে না। ভাত খেলে সুগার বাড়বে, আবার কারও মতে সবজি রাখলে শর্করা বৃদ্ধির আশঙ্কা কম। সবমিলে বেশ সন্দিহান।
এ অবস্থায় অনেকেই পুষ্টিবিদ কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যতালিকা সাজিয়ে রাখেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা কী বলেন? পুষ্টিবিদরা বলেন, ডায়াবেটিসে ভাত-রুটির কোনো দোষ নেই। তবে পরিমাণের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর সঙ্গে এক বাটি পরিমাণ সালাদ রাখতে হবে। তাতেই রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক থাকবে। আর ভাত-রুটির সঙ্গে লেবু-শসা-পেঁয়াজ খেলে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকার ব্যাপারে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন পুষ্টিবিদ ঈশানী গঙ্গোপাধ্যায়।
ভারী খাবারের সঙ্গে সালাদ খাওয়া কতটা জরুরি:
দুপুরে বা রাতের খাবার যাইহোক, সঙ্গে সালাদ রাখা জরুরি। সালাদে শসা, পেঁয়াজ, টমেটো, গাজর, মুলা, লেটুস, লেবুর রস রাখতে পারেন। পুষ্টিবিদের ভাষ্যমতে, প্রথমত ভাত-রুটির সঙ্গে সালাদ খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ করেই বৃদ্ধি পায় না। এতে বরং হজম ভালো ও তাড়াতাড়ি হয়। এ জন্য ডায়াবেটিসের রোগী না হওয়ার পরও খাবারে সালাদ রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন পুষ্টিবিদরা।
কেন ডায়েটে সালাদ রাখা উচিত:
ডায়াবেটিসে সবসময় খাবারের গ্লাইসেমিক সূচক দেখা হয়। অর্থাৎ, যেসব খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে, সেসব খাবার যতটা কম খাওয়া যায় ততই ভালো। তবে এর অর্থ এই নয় যে, ভাত-রুটি খাওয়া বন্ধ করে দেয়া। কার্বোহাইড্রেটেডের সঙ্গে ফাইবার রাখলে ডায়েট ব্যালান্স হয়। পুষ্টিবিদের মতে, সালাদে ফল ও সবজি থাকে। এর মধ্যে ফাইবার রয়েছে। আর ভারী ও কার্বোহাইড্রেটেড খাবারের সঙ্গে ফাইবার রাখা হলে হঠাৎই সুগার লেভেল বৃদ্ধি পায় না। বরং হজম ভালো হয়।
ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্যতালিকা কেমন হবে:
পুষ্টিবিদ ঈশানী বলেন, ডায়াবেটিসের রোগীদের খাবারের প্লেট চারভাগে সাজাতে হবে। একভাগে ভাত বা রুটির মতো কার্বোহাইড্রেটেড, একভাবে প্রোটিন ও বাকি দুই ভাগে ফাইবার রাখতে হবে। এই দুই ভাগের মধ্যে একভাগে সালাদ রাখুন, অন্যভাগে সবজি তরকারি। এ নিয়ম শুধু ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যই নয়। চাইলে যে কেউই এভাবে খাবার খেতে পারেন। ডায়াবেটিস না থাকলেও প্রতিদিন সালাদ খেতে পারেন। তাকে হজমশক্তি যেমন ভালো হবে, একইভাবে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করবে।
সব খাবারের সঙ্গে কি সালাদ খাওয়া যায়:
সাধারণত ভাত-রুটির মতো ভারী খাবারের সঙ্গে আমাদের সালাদ খাওয়া হয়। তবে বিরিয়ানি, ফ্রাইড রাইস, জাঙ্ক ফুডের সঙ্গেও সালাদ খাওয়া হলে তাতে উপকার নেই। পুষ্টিবিদ ঈশানীর ভাষ্যমতে―এসব খাবারে সালাদ রাখা হলে ফ্যাটের পরিমাণ কম হয় না। কেবলই খাবার ভালোভাবে হজম হয়। এ ছাড়া অন্য কোনো উপকারিতা পাওয়া যায় না।
সবমিলে সালাদ স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। এতে যেসব সবজি ও ফলমূল থাকে, তা পুষ্টিগুণে ভরপুর হয়। ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এ জন্য দুপুর বা রাত কিংবা দিনের যেকোনো সময়ই খাবার খাওয়া হলে, তাতে সালাদ রাখা হলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর হজমে সহায়তা ও রোগের ঝুঁকি কমার উপকারিতা তো রয়েছেই।
Comments