প্রাকৃতিক উপায়ে দাঁত ঝকঝকে করুন

দাঁতের রং ধূসর বা হলদে হয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। প্রতিদিনের খাবার, পানীয়, এবং পর্যাপ্ত যত্নের অভাবে দাঁতে দাগ পড়ে যায়। অনেকেই তাই দাঁত সাদা করার জন্য ব্যবহার করেন হোয়াইটনিং টুথপেস্ট, জেল, বা ডেন্টিস্টের ব্লিচিং ট্রিটমেন্ট। তবে এসব উপায় যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি রসায়নভিত্তিক হওয়ায় দাঁতের এনামেল ও মাড়ির ক্ষতি হতে পারে। তাই যারা প্রাকৃতিক ও সহজ উপায়ে দাঁতের উজ্জ্বলতা ফেরাতে চান, তাদের জন্য রয়েছে কিছু খাবার, যেগুলো দাঁতের দাগ তুলতে সাহায্য করতে পারে। হেলথলাইনের এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু খাবারের নাম জানিয়েছেন ডেন্টিস্টরা।
১. স্ট্রবেরি: স্ট্রবেরিতে রয়েছে মালিক অ্যাসিড, যা প্রাকৃতিক ব্লিচিং উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি দাঁতের দাগ হালকা করতে সহায়ক। একই সঙ্গে মালিক অ্যাসিড মুখে লালা উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা দাঁতের চারপাশের খাদ্যকণা ও ব্যাকটেরিয়া দূর করে।
২. তরমুজ: স্ট্রবেরির চেয়েও বেশি পরিমাণ মালিক অ্যাসিড রয়েছে তরমুজে । এটি শুধু দাঁত হালকা করতেই সাহায্য করে না, বরং দাঁত পরিষ্কার রাখতেও ভূমিকা রাখতে পারে। যদিও তরমুজের আঁশ দাঁত ঘষে দাগ তুলতে পারে এমন দাবির পেছনে এখনো কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
৩. আনারস: দাঁতের উপর থাকে এক ধরনের প্রোটিন স্তর, যাকে বলে পেলের স্তর। এই স্তর খাবারের রং শোষণ করে দাঁতের দাগ সৃষ্টি করে এবং ব্যাকটেরিয়াও সহজে বসে যায়। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন নামক একটি প্রোটিওলাইটিক এনজাইম এই প্রোটিন স্তর ভেঙে দেয়, ফলে দাঁত দাগমুক্ত ও পরিষ্কার থাকে।
৪. পেঁপে: পেঁপেতেও আছে প্রোটিওলাইটিক এনজাইম, যার নাম প্যাপন। এটি দাঁতের উপরিভাগের প্রোটিন গঠন ভেঙে দেয়, যা দাগ দূর করে ও প্ল্যাক জমা কমায়। এটি দাঁতকে স্বাস্থ্যকর রাখে।
৫. দুধ: শুনতে অবাক লাগলেও দুধে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড দাঁত হালকা করতে সাহায্য করে। এছাড়া দুধে থাকা কেসিন দাঁতের রং ধরে রাখতে সহায়ক। এটি ক্যাভিটি প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং চায়ের মতো রঞ্জকযুক্ত পানীয় থেকে দাঁতকে রক্ষা করে। চিজ ও দইয়ের মতো অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবারেও রয়েছে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও কেসিন, যা দাঁতের জন্য উপকারী।
কতদিনে দাঁত সাদা হবে: এই খাবারগুলো দাঁত সাদা করতে কতদিন সময় নিবে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। কারণ এ বিষয়ে তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা নেই। তবে রাসায়নিক উপাদানের তুলনায় প্রাকৃতিক পদ্ধতির ফল পেতে সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে। আপনার দাঁতের বর্তমান অবস্থা, জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের ওপর ফল পাওয়ার সময় নির্ভর করবে।
বাড়তি কিছু প্রাকৃতিক দাঁত ঝকঝকে করার উপায়: ডেন্টিস্টরা দাঁতের যত্ন নিতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো মানলে দাঁত প্রাকৃতিকভাবেই সাদা থাকবে। এগুলো হলো:
> নিয়মিত ব্রাশ ও ফ্লস করা: দিনে অন্তত দু'বার ব্রাশ করুন এবং একবার ফ্লস করুন। এতে দাঁতের দাগ ও ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।
> বেকিং সোডা ব্যবহার: এক চামচ বেকিং সোডা ও এক চামচ পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে দাঁতে ঘষে নিন। এটি দাঁতের উপরিভাগের দাগ তুলতে কার্যকর।
> সরিষার তেল ও লবণ: সরিষার তেলে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে দাঁতে ঘষে নিন। এটি দাঁত পরিষ্কার রাখার একটি পুরোনো আয়ুর্বেদিক পদ্ধতি।
> দাগ তৈরির খাবার এড়িয়ে চলা: কফি, চা, টমেটো সস, ডার্ক বিয়ারে থাকা পিগমেন্ট দাঁতের দাগের অন্যতম কারণ। এসব পানীয় পান করার সময় স্ট্র ব্যবহার করুন, আর চায়ে দুধ যোগ করলে দাগের সম্ভাবনা কমে।
স্ট্রবেরি, তরমুজ, আনারস, পেঁপে ও দুধ জাতীয় খাবার দাঁত হালকা করতে সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া দৈনন্দিন পরিচর্যা, কিছু প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় এবং দাগ সৃষ্টিকারী খাবার থেকে দূরে থাকলে আপনি প্রাকৃতিকভাবেই হাসি উজ্জ্বল রাখতে পারবেন।
Comments