কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে কী করবেন?

বর্তমান ডিজিটাল-নির্ভর কাজের পরিবেশে কর্মক্ষেত্রের মানসিক চাপ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্রমাগত অনলাইন থাকা, চাকরি হারানোর ভয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের চারপাশে প্রচলিত কুসংস্কার এই চাপে ইন্ধন যোগাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নমনীয় কর্মনীতি, সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা কর্মসূচি এবং ব্যবস্থাপকদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ এই তিনটি দিকেই গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মীদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া এবং মুক্তভাবে কথোপকথনের পরিবেশ গড়ে তোলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপের বর্তমান ধারা
১. ক্রমাগত যোগাযোগের চাপ
স্মার্টফোন, চ্যাট অ্যাপ এবং বিভিন্ন প্রোডাক্টিভিটি টুল ব্যবহারে কর্মীরা সর্বক্ষণ অনলাইনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের সীমারেখা মিলিয়ে যাচ্ছে, এবং এর ফলে মানসিক ক্লান্তি ও ব্যস্ততা তৈরি হচ্ছে।
২. ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, চাকরির পুনর্গঠন, ছাঁটাই এবং দ্রুতগতিতে এআই ব্যবহারের ফলে অনেক কর্মীর মধ্যে চাকরি হারানোর আতঙ্ক বিরাজ করছে। এতে করে কর্মদক্ষতা কমে যাচ্ছে এবং মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
৩. মানসিক স্বাস্থ্যের চারপাশে ভয়
অনেক কর্মী মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে দ্বিধা বোধ করেন। 'দুর্বল' ভাবার ভয় বা পদোন্নতি হারানোর আশঙ্কা তাদের চুপ থাকতে বাধ্য করে, এমনকি তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলেও।
৪. অন্তর্ভুক্তির অভাব
কম প্রতিনিধিত্বশীল গোষ্ঠীর কর্মীরা প্রায়ই বেশি চাপের সম্মুখীন হন। অফিসে বর্জিত অনুভব করা, নেতৃত্ব পর্যায়ে প্রতিনিধি না থাকা, বা ঘন ঘন ঘটে যাওয়া ছোট কিন্তু কষ্টদায়ক মন্তব্য তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানসিক চাপ কমানোর বিশেষজ্ঞ-পরামর্শ
১. নমনীয় কর্মনীতি প্রণয়ন করুন
কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটি নীতি তৈরি করুন যা তাদের কাজের সময় নিয়ে স্বাধীনতা দেয়। এতে কর্ম-জীবন ও পারিবারিক দায়িত্ব সামঞ্জস্য করা সহজ হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
২. সর্বাঙ্গীণ সুস্থতা কর্মসূচি চালু করুন
শুধু শারীরিক নয়, মানসিক ও পারিবারিক কল্যাণকেও গুরুত্ব দিন। উদাহরণস্বরূপ, ২৪ ঘণ্টার মানসিক স্বাস্থ্য হেল্পলাইন, কর্মী কাউন্সেলিং প্রোগ্রাম এবং মানসিক স্বাস্থ্য অ্যাপ চালু করা যেতে পারে।
৩. ব্যবস্থাপকদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ দিন
যেমন শারীরিক বিপদের লক্ষণ শনাক্তের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়, তেমনি মানসিক চাপ বা সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ চিনে ফেলার ট্রেনিংও দিন। সহানুভূতিপূর্ণ কথোপকথনের মাধ্যমে কর্মীদের ভরসা অর্জন করুন।
৪. নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আলোচনা
নেতাদের নিজস্ব পক্ষপাতিত্ব সম্পর্কে সচেতন করা, কর্মী সহায়তা গ্রুপ গঠন করা এবং খোলামেলা আলোচনা করার 'স্পেস' তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিনের আলাপে মানসিক স্বাস্থ্যের জায়গা থাকা দরকার।
৫. প্রচেষ্টা ও দলীয় কাজের স্বীকৃতি দিন
শুধু ফলাফল নয়, চেষ্টা ও সহযোগিতাকেও পুরস্কৃত করুন। সপ্তাহে একবার 'সফলতা শেয়ার' করার মতো ছোট উদ্যোগ দলীয় মনোভাব ও মনোবল বাড়াতে সাহায্য করে।
কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা কোনো আনুষ্ঠানিকতা নয় এটি প্রতিষ্ঠানের টেকসই সফলতার জন্য অপরিহার্য। কর্মীরা যখন অনুভব করেন যে তারা সম্মানিত ও সহানুভূতির পরিবেশে কাজ করছেন, তখন তারা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে আরও উৎসাহিত হন।
সুতরাং, কর্মীদের স্বাস্থ্য রক্ষা মানেই একটি এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে মানুষ সত্যিকার অর্থেই উন্নতি করতে পারে আর প্রতিষ্ঠানও।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
Comments