ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা কি বড় কোনো রোগের লক্ষণ?

সুস্থ থাকতে ঘুম অপরিহার্য। অনেক সময় এই ঘুম আমাদের শরীরের অসুস্থতার বিভিন্ন ইঙ্গিত দেয়। বিশেষ করে বলতে হবে ঘুমের মধ্যে নাম ডাকার বিষয়ে। রাতে ঘুমের মধ্যে অনেকেই নাক ডাকেন। অনেক সময় আমরা এটাকে খুব সাধারণ ব্যাপার ভেবে অবহেলা করি। কিন্তু জানেন কি, এই নাক ডাকা হতে পারে বড় কোনও স্বাস্থ্যসমস্যার লক্ষণ? এমনকি, এটি হার্ট ফেলিওরের মতো মারাত্মক রোগের ইঙ্গিতও হতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে নাক ডাকা শুধু ঘুমের সমস্যা নয়, এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়া নামক জটিল ঘুমজনিত রোগ। আর এই রোগটি সময়মতো চিকিৎসা না করালে বাড়িয়ে দিতে পারে হার্ট ফেলিওর বা হৃদযন্ত্র বিকলের ঝুঁকি। তবে সব নাক ডাকাই অবশ্য ভয় পাওয়ার মতো নয়। তবে যদি নিয়মিত ও জোরে নাক ডাকেন, মাঝেমধ্যে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে বা ঘুমের মধ্যে বারবার জেগে ওঠেন—তাহলে অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত। এই লক্ষণগুলো স্লিপ অ্যাপনিয়া নামে পরিচিত এক ধরনের ঘুমজনিত রোগের কারণে হতে পারে।
নাক ডাকা আর হার্ট ফেলিওরের সম্পর্ক: নাক ডাকা মানেই সেটা হার্টের রোগের পূর্বাভাস নয়। তবে যারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চস্বরে ও অনিয়মিতভাবে নাক ডাকেন, তাদের মধ্যে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এই রোগে ঘুমের সময় শ্বাসনালিতে বাধা সৃষ্টি হয়। ফলে একেকবার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় ২০-৩০ বার পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায়। শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয়, আর মস্তিষ্ক আপনাকে জাগিয়ে তোলে শ্বাস নেয়ার জন্য। যদিও আপনি টেরও পান না, এই ঘুমভাঙা ঘটতে পারে এক রাতে শত শত বার। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে শরীরে কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন নামে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এগুলো রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত করে এবং দীর্ঘদিনে হার্ট ফেলিওরের ঝুঁকি বাড়ায়।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরি: যদি নিয়মিত উচ্চস্বরে নাক ডাকা, দিনের বেলা ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব অনুভব, রাতে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে এমন উপসর্গ দেখা যায়—তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
প্রয়োজনে চিকিৎসক আপনাকে পলিসমনোগ্রাফি নামক একটি বিশেষ ঘুমের পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। এই পরীক্ষায় ঘুমের সময় মস্তিষ্কের তরঙ্গ, হৃৎস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, চোখের গতি, এমনকি পায়ের নড়াচড়াও পর্যবেক্ষণ করা হয়। এর মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়া, নারকোলেপসি, বা রেস্টলেস লেগ সিনড্রোমের মতো অন্যান্য ঘুমের সমস্যা ধরা পড়ে। হার্ট ফেলিওরের সম্ভাবনা থাকলে ইকোকার্ডিওগ্রাম, সিটি স্ক্যান বা স্ট্রেস টেস্টের মতো পরীক্ষাও করা হতে পারে।
নাক ডাকা হয়তো অনেকের কাছে তেমন গুরুতর বিষয় মনে না-হতে পারে, কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে প্রাণঘাতী ঝুঁকি। তাই নিয়মিত উচ্চস্বরে নাক ডাকা হলে তা উপেক্ষা করবেন না।
সূত্র: হেলথলাইন
Comments