শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার পেছনে এসি দায়ী নয়তো?

গ্রীষ্মের এই তীব্র গরমে এসিতেই ভরসা রাখেন অনেকে। বাইরের অসহ্য গরম থেকে বাসায় ফিরেই এসির মধ্যে কিছুক্ষণ বসতেই শীতল হয় মন। বাসা-বাড়ির সবার আস্থা এই এসি। কিন্তু জানেন কী, এর শীতল আবহাওয়ায় প্রাপ্তবয়স্করা স্বস্তি অনুভব করলেও নিজেদের অজান্তেই বিপদে পড়ছে শিশুরা।
শুনে কিছুটা অবাক লাগলেও এটাই সত্য যে, অপরিষ্কার এসি থেকে ঠান্ডা কিংবা নিউমোনিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গরমের কারণে বাসা-বাড়িতে হয়তো নিয়ম করে এসি চালাচ্ছেন। এ অবস্থায় হঠাৎ করেই খুশখুশে কাশি হতে পারে। যদি প্রাথমিকভাবে সেই কাশি ঠিক না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে এক্স-রে করার পর নিউমোনিয়া শনাক্ত হওয়ার কথা জানিয়েছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক।
এ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশুদের স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন এসির সার্ভিসিং না করানো হলে তা ব্যবহার করবেন না। এসির স্যাঁতসেঁতে ডাক্টে লিজিওনেল্লা নামে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় সারা রাত এসি চালানো হলে সেই ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে প্রবেশ করে। তা থেকে দমবন্ধ করা কাশি হয়ে থাকে। ফলে ফুসফুসে নিউমোনিয়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।
ডা. নিশান্তদেব জানিয়েছেন, গরমের এই সময় তীব্র জ্বর নিয়ে হাসপাতালে শিশুদের ভিড় দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের প্রশ্ন করলে জানা যায়, কেউ ঘেমে ভিজে বাড়ি প্রবেশ করে এসি রুমে থাকেন, কেউ বাইরে থেকে বাসায় গিয়ে ফ্রিজের ঠান্ডা পানিতে চুমুক দেন।
পশ্চিমবঙ্গের পিয়ারলেস হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ারের বিভাগী প্রধান ডা. সহেলি দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, এসব কারণেই ঘরে ঘরে রাইনো-অ্যাডিনো ভাইরাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এ মৌসুমে এত জ্বর হওয়ার কথা নয়। তবে গত কয়েকদিনে অনেক শিশু তীব্র জ্বর নিয়ে হাসপাতালে গেছেন বলে জানিয়েছেন এ চিকিৎসক।
উপসর্গ: চোখ লাল, গলা ব্যথা, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হবে এবং পায়খানা পাতলা হবে।
গরমের এই সময় প্রায় সব বাড়িতে এসি। শিশুদের স্কুলও ছুটি। এ সময় তারা বাইরে খেলাধুলা করে সরাসরি এসি রুমে ঢুকে পড়ছে। কেউ আবার ঘামে ভিজে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করছে। এ ব্যাপারে ডা. সহেলি দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, তাপমাত্রার এই ভারসাম্যহীনতার কারণে ভাইরাস মাথাচাড়া দিচ্ছে।
এ চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, তাপমাত্রার উঠা-নামার কারণে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করছে না। অনেকেই আবার গরমের সময় আইসক্রিম খান, যা বিপজ্জনক। এতে গলার তাপমাত্রা অনেকটা নিচে নেমে যায়। এতে মুখে থাকা জীবাণু প্যাথোজেনিক হয়ে সংক্রমণ সক্রিয় হয়ে উঠে।
শিশুরাই কেন আক্রান্ত হয়: ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের পেডিয়াট্রিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রিয়ঙ্কর পাল জানিয়েছেন, বয়স্কদের শরীরে এ ধরনের ভাইরাস একাধিবার হানা দেয়। স্বাভাবিকভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে অ্যান্টিবডি থাকে। কিন্তু শিশুদের তা নেই। এ কারণে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়। এ অবস্থায় অভিভাবকদের প্রতি পরামর্শ, তারা যেন এসি খুব বেশি ব্যবহার না করেন। এটি যেন নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং তা অবশ্যই ২৪ থেকে ২৬ ডিগ্রির মধ্যে রাখা উচিত।
Comments