পায়ে যে লক্ষণগুলো থাকা মানে বিপদের শঙ্কা

শরীরের যেকোনো জটিল সমস্যা হঠাৎ করেই দেখা দেয় না। এর আগে কয়েকবার বিভিন্ন মাধ্যমে তা জানান দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যা বুঝতে পারলে শুরুতেই সমস্যা শনাক্ত করা যায় এবং প্রতিকারে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। আর লক্ষণগুলো বুঝতে না পারলেই ভয়াবহ বিপদের সম্ভাবনা থাকে।
এ ক্ষেত্রে পা-ও কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে ব্যবহার হয়। অনেক সময় দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে পা ঝিঁ ঝিঁ করে বা গোড়ালিতে ব্যথা করে। যেসব সমস্যা উপেক্ষা করে থাকি আমরা। অথচ এই পা গুরুতর স্বাস্থ্যগত উদ্বেগের দিকে ইঙ্গিত করে থাকে। দীর্ঘক্ষণ পা শরীরকে বহন করে, এ জন্য শরীরের ভেতরে কোনো সমস্যা থাকলে প্রথমেই পা প্রতিক্রিয়া জানায়। সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী শারীরিক জটিলতার ইঙ্গিত প্রকাশ করে, পায়ের এমন কয়েকটি লক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
ঠান্ডা পা, যা সহজে গরম হয় না: অনেক সময়ই দেখা যায়, আবহাওয়া গরম থাকার পরও পা ঠান্ডা অনুভব হয়। মূলত রক্ত সঞ্চালনের দুর্বলতার লক্ষণে এমনটা হতে পারে। রক্ত ভালোভাবে প্রবাহিত না হলে, যেমন- পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ হলে পা উষ্ণতা হারাতে থাকে। ফ্যাটি জমার কারণে ধমনী সংকুচিত হলে এই রোগ হয়। এ কারণে পায়ে রক্ত পৌঁছানো কঠিন হয়। কখনো কখনো এটি হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের সঙ্গেও যুক্ত হয়। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলেও পা ঠান্ডা হতে পারে, বিশেষ করে যদি এটি অকার্যকর থাকে (হাইপোথাইরয়েডিজম)।
সূঁচের সংবেদন: প্রায়ই অনেকে বলে থাকেন তাদের পা ক্রমাগত ঝিনঝিন করে অসাড়তা অনুভব হয়। স্নায়ু জনিত সমস্যা থাকলে এমনটা হতে পারে, আবার ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকেও হয়। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বলা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রক্তে উচ্চ শর্করার পরিমাণ স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে পায়ের পাতা থেকে শুরু করে উপরের দিকে যেতে পারে। অনেক সময় ভিটামিন বি১২ এর ঘাটতি বা অ্যালকোহলজনিত কারণেও স্নায়ুর সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গোড়ালিতে ব্যথা: পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা নতুন কিছু নয়। বিষয়টি অবশ্য প্রায় সবাই অবহেলা করেন। অনেকের এই সমস্যা সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হয়, কারও ঘুম থেকে উঠার পর তীব্র হয়। এটি প্ল্যান্টার ফাসাইটিসের লক্ষণ। গোড়ালিতে ব্যথা এমন সমস্যা, যেখানে গোড়ালির হাড় ও পায়ের আঙুলের সংযোগকারী টিস্যু প্রদাহিত হয়। অনেক সময় এই সমস্যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস বা অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের মতো অটোমিউন সমস্যার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এই রোগ জয়েন্টে তীব্র ব্যথা বৃষ্টি করতে পারে।
হাঁটার সময় টান ধরা: নিজেকে সুস্থ-স্বাভাবিক মনে হলেও হাঁটার সময় অনেকেই পায়ে টান ধরা অনুভব করেন। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হোঁচট খাওয়া বা পায়ের পাতা ঝরে পড়া―একটি অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে। এটি কোনো রোগ না হলেও বড় কোনো জটিলতার লক্ষণ, যেমন স্নায়বিক ব্যাধি। পায়ের পাতা ঝরে পড়ার সমস্যা তখনই হয়, যখন পায়ের সামনের অংশটি উপরে তোলার পেশীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, স্ট্রোক, এমনকি পিছলে যাওয়া মেরুদণ্ডের ডিস্কের মতো অবস্থা মূলত পায়ের নড়াচড়ার জন্য দায়ী স্নায়ুগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে।
বারবার চুলকানি: কারও কারও বারবার পা চুলকানি হয়। এটি শুষ্কতা বা ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে হতে পারে। তবে বারবার যদি এই সমস্যা হয় বা বিশেষ করে লালচেভাব বা ত্বক ফাটা থাকলে, এটি অ্যাথলিটস ফুটকে নির্দেশ করে থাকে। যা একটি সাধারণ ছত্রাকের সংক্রমণ। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা এই সংক্রমণের ঝুঁকিতে বেশি থাকেন। কারণ, সুগার উচ্চ মাত্রায় থাকলে তা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়। এছাড়া একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগও শুরুতে পায়ে দেখা দিতে পারে। তবে পায়ের যেকোনো সমস্যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
Comments