বগুড়ার শেরপুরে গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে নয়-ছয়ের অভিযোগ

বগুড়ার শেরপুরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় গৃহীত নানা প্রকল্পে নয়-ছয় সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পগুলো প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পায়। একাধিক প্রকল্পের বেশিরভাগই শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ, বাস্তবে এগুলোর অধিকাংশই দৃশ্যমান হয়নি। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে পুরো প্রকল্পের কাজ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সচেতনমহলে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছওে শেরপুর পৌরসভার অনুকূলে টিআর কর্মসূচির আওতায় পাঁচটি প্রকল্পের জন্য মোট ১০ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে, শেরপুর পৌর শিশু পার্ক সংস্কার (৪ লাখ টাকা), উপজেলা পরিষদ টেনিস কোর্ট সংলগ্ন ওয়াশরুম ও চেঞ্জরুম নির্মাণ (৩ লাখ টাকা), মডেল মসজিদেও চেয়ার ক্রয় ও দান বাক্স নির্মাণ (২ লাখ ১৫ হাজার টাকা), শেরপুর শিল্পকলা একাডেমি সংস্কার (১ লাখ ১৫ হাজার টাকা), উপজেলা পরিষদের হলরুম সংস্কার ও আসবাবপত্র ক্রয় (১ লাখ ২৭ হাজার ৫৬৫ টাকা)।
টিআর বাস্তবায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রকল্প অনুমোদনের ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করে অর্থবছরের মধ্যেই শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর ১ম ও ২য় কিস্তির ৫ টি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২৬ তারিখে। পর্যাপ্ত সময় থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শেষ তো দূরের কথা, শুরুই করা হয়নি। মাঠপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, শুধুমাত্র শিশুপার্কে কয়েকগাড়ি মাটি ফেলানো হয়েছে এবং মডেল মসজিদের চেয়ার ক্রয় ও দানবাক্স নির্মাণ কাজ হয়েছে। অন্য পাঁচটি প্রকল্পে বাস্তবায়নের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
একই অর্থবছরে এডিপির আওতায় "শেরপুর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির বাউন্ডারী ওয়াল সংস্কার করণ" শিরোনামে আরও একটি প্রকল্পের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মডেল মসজিদের কাজ এবং শিশু পার্কের আংশিক কাজ ছাড়া টেনিস কোর্টসহ অন্যান্য প্রকল্পগুলোর কোনো কাজই হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পগুলো অনুমোদন হলেও কাজ না করেই সম্পূর্ণ অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে।
সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো শিল্পকলা একাডেমিকে নিয়ে। শেরপুরে শিল্পকলা একাডেমির কোনো নিজস্ব ভবনই নেই। অথচ দুটি ভিন্ন কর্মসূচিতে শুধুমাত্র শিল্পকলা একাডেমির নামেই মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার প্রকল্প দেখানো হয়েছে, যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব মেলেনি।
শেরপুরের সাংস্কৃতিক কর্মীরাও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। 'ভবের হাট' নামক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি মো. মোজাফর আলী এবং স্বরমালিকার সংগীত একাডেমীর পরিচালক আশরাফুল আলম রিপন উভয়েই জানান, দীর্ঘদিন ধরে শেরপুরে শিল্পকলা একাডেমির কোনো কার্যক্রম বা নির্দিষ্ট ভবন নেই। তারা একটি কার্যকরী কমিটি গঠনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার দাবি জানান।
প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে চারটি প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে রয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি)। বাকি তিনটির সভাপতি হিসেবে রয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও মডেল মসজিদের ইমাম মো. হেদায়েতুল্লাহ। তবে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বিষয়ে তাদের বক্তব্যে দেখা গেছে ভিন্নতা এবং অসঙ্গতি।
সংশ্লিষ্ট চারটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সময় না থাকায় চারটি প্রকল্পের অর্থ উত্তোলন করে ব্যাংক ড্রাফট আকারে রাখা হয়েছে। কাজগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।"
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল জব্বার বলেন, ২০২৪ অর্থবছরের গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়নের ভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে মসজিদের দানবাক্স, পৌরসভার শিশুপার্কের সংস্কার, প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি স্টেইনলেজ স্টীলের ডাস্টবিনসহ বেশকিছু কাজ দৃশ্যমান রয়েছে। তবে বৃষ্টি কারণে পুরো কাজ শেষ করে অনেকটা বিলম্বিত হচ্ছে। তাছাড়া ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের এই প্রকল্পগুলো নিয়ে এমন প্রশ্নে বিষয়টি বেশ পুরানো, তাছাড়া আমার আমলের নয় বলে দাবী করেন ওই কর্মকর্তা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আশিক খান বলেন, "গত ২৪-২৫ অর্থবছরে টিআর-কাবিখা খাতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার বেশি বরাদ্দ দিয়ে আমরা প্রায় সাতটি প্রকল্প গ্রহণ করি। সেই প্রকল্পগুলোর কাজ অনেকটাই দৃশ্যমান, তবে বৃষ্টির কারনে বিলম্ব হলেও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।"
এ নিয়ে সদ্য যোগদানকারী বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, "সরকারি বিধি মোতাবেক টিআর প্রকল্পের বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হিসেবে সরকারি কোন কর্মকর্তা থাকার কোন নিয়ম নাই। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়, এটা কখনও আইনসিদ্ধ নয়।"
শেরপুর পৌরসভায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ বলেন, "প্রকল্প বাস্তবায়নে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
Comments