যেসব ভিটামিনের অভাবে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর ক্ষতি হয়

সুস্থ থাকতে আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিছু উপাদান যার মধ্যে অন্যতম ভিটামিন এবং খনিজ। সাধারণত আমরা খাবারের মাধ্যমে এই উপাদানগুলো পাই। বিভিন্ন সময় এসবের ঘাটতি দেখা দিলে বিভিন্ন রোগে ভুগতে হয়। বিশেষ করে কিছু ভিটামিন এবং খনিজের অভাবে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর ভয়াবহ ক্ষতি হয়। মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ব্রেইন এবং লাইফের প্রতিবেদনে এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরে ভিটামিন এবং খনিজ উপাদানের ঘাটতির মূল কারণ অপুষ্টি, যেমন—অপর্যাপ্ত খাবার খাওয়া, পুষ্টিকর খাবারের অভাব, খাদ্যাভ্যাসের গড়বড় বা ডায়েটিং সমস্যা। পাশাপাশি কিছু নির্দিষ্ট রোগ যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো রোগগুলোও ভিটামিন শোষণে বাধা সৃষ্টি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফইএ) তথ্য অনুসারে, ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া ও মায়েলোনিউরোপ্যাথির সৃষ্টি করতে পারে। এতে মেরুদণ্ড ও পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে হাঁটাচলায় সমস্যা, দুর্বলতা, অবশ ভাব এবং সমন্বয়হীনতা দেখা দিতে পারে। এই ঘাটতি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসা সম্ভব। গরুর মাংস, ডিম, দুধ ও মুরগির মাংস ভিটামিন বি১২-র অন্যতম উৎস। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক পরিমাণ ২.৪ মাইক্রোগ্রাম।
অন্যদিকে, মানবদেহের পাঁচটি প্রধান খনিজ হল ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম। অবশিষ্ট উপাদানগুলিকে 'ট্রেস উপাদান' বলা হয়। আর এই ট্রেস উপাদানের মধ্যে রয়েছে আয়রন, ক্লোরিন, কোবাল্ট, কপার, জিংক, ম্যাংগানিজ, মলিবডেনাম, আয়োডিন এবং সেলেনিয়াম।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও ইউনিভার্সিটি অব কলোরাডোতে নিউরোলজির সহকারী অধ্যাপক ডা. প্রেসম্যান জানান, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কপারের ঘাটতির মায়েলোনিউরোপ্যাথির সঙ্গে জড়িত। এই খনিজ মেরুদণ্ডের সুরক্ষা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কপারের ঘাটতির ফলে স্নায়বিক সংকেতগুলো ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। মেনকেস ডিজিজ বা অপুষ্টিজনিত সমস্যা এবং ব্যারিয়াট্রিক সার্জারির পর যদি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে তামার ঘাটতি দেখা দিতে পারে। কলিজা, পালং শাক ও ডার্ক চকলেটে কপার পাওয়া যায়। পুরুষদের জন্য দৈনিক প্রয়োজন ১,৪০০ মাইক্রোগ্রাম এবং নারীদের জন্য ১,১০০ মাইক্রোগ্রাম কপার লাগে।
অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ায়। সালমন, সার্ডিন, ডিমের কুসুম ও গরুর মাংসে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এছাড়াও সূর্যের আলো ভিটামিন ডি তৈরি করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, ভিটামিন ই-এর ঘাটতি স্নায়ুর ক্ষতি করে। এতে হাত-পায়ে অবশ ভাব, চলাফেরায় সমস্যা, কথা বলায় অসুবিধা ও প্রতিক্রিয়াশক্তি কমে যেতে পারে। এটি পাওয়া যায় বাদাম, বীজ, শাকসবজি ও তেলজাতীয় খাবারে। দৈনিক প্রয়োজন ১৫ মিলিগ্রাম।
গর্ভাবস্থায় ফলেট বা ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের গঠনে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলেট পাওয়া যায় শাকসবজি ও লেবুজাতীয় ফলে। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৪০০ মাইক্রোগ্রাম এবং গর্ভবতী নারীদের জন্য ৬০০ মাইক্রোগ্রাম গ্রহণ করা জরুরি।
সবশেষে, ডা. প্রেসম্যান জানান, যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে রক্ত পরীক্ষা করে ভিটামিনের ঘাটতি চিহ্নিত করা উচিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সুষম খাদ্য গ্রহণ করলেই ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি পূরণ সম্ভব। তবে চিকিৎসা না নিলে সমস্যা জটিল হবে। তাই সময় নষ্ট না করাই ভালো।
Comments