পুষ্টিবিদদের মতে সেহরিতে যে ধরনের খাবার খাবেন

বছর ঘুরে আবারও পবিত্র রমজান মাসে পৌঁছেছি সবাই। এ মাসে বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান রোজা রাখেন। এ মাসের তাৎপর্য অনেক। ভোরে সেহরি খাওয়ার পর থেকে সারাদিন না খেয়ে নামাজ এবং ভালো কাজের মাধ্যমে দিন কাটিয়ে থাকেন সব মুসলিম। আর সন্ধ্যায় ইফতারে খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রোজা সম্পন্ন করেন।
প্রতিটি সুস্থ-সবল এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষদের রমজান মাসে রোজা রাখতে হয়। তবে অন্তঃসত্ত্বা, স্তন্যদায়ী মা বা ঋতুস্রাব চলমান নারী, অসুস্থ, বয়ঃসন্ধি পার না হওয়া শিশু এবং সফররত ব্যক্তিদের রোজার অব্যাহতি থাকে। রমজান মাসে যেহেতু রোজা থাকতেই হবে, এ কারণে সেহরি ও ইফতারের খাদ্যসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিবিসি বাংলা সেহরির খাদ্যতালিকায় কেমন খাবার রাখতে হবে, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এবার তাহলে সেহরির খাদ্যতালিকা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
রোজা রাখার প্রস্তুতি মূলত সেহরি দিয়েই শুরু হয়। এ কারণে সেহরিতে সঠিক খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবার সারাদিনের ক্ষুধা মোকাবিলায় সহায়তা করে।
তুরস্কের পুষ্টিবিদ ইসমেত তামের জানিয়েছেন, রমজান মাসে সারাদিন যে শক্তি ও পুষ্টির প্রয়োজন হয়, তা পূরণ করার জন্য সেহরি ও ইফতারে এমন সব খাবার খেতে হবে, যা প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। মূলত বেশি পুষ্টিকর কিন্তু খুব ভারী না, তবে পেট ভরবে এমন খাবারে গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন এ পুষ্টিবিদ।
তার ভাষ্য অনুযায়ী―দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, শসা-টমেটোর মতো সালাদ, স্যুপ, ফলমূল, অলিভ অয়েল বা কম তেলে রান্না করা সবজিজাতীয় খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আবার মাছ-মাংস ও সবজির পাশাপাশি দই-চিড়ার মতো খাবারেও গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে আরেক পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলামের মতে সেহরিতে জটিল ধরনের শর্করা খাবার খাওয়া ভালো। বিশেষ করে হোলগ্রেইন বা পূর্ণাঙ্গ শস্য। কেননা, এ ধরনের খাবার শরীরে ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করে, যা সারাদিনের জন্য খুবই উপকারী। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ওটস, হোলগ্রেইন বা সম্পূর্ণ শস্যের রুটি, সিরিয়াল এ জাতীয় খাবার সেহরি খাদ্যতালিকায় রাখা ভালো।
এছাড়া খাদ্যতালিকার আরেকটি দিকে খেয়াল রাখা বিবেচনার বিষয়। তা হলো ফাইবার বা আঁশ যেন বেশি থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মটরশুঁটি, ছোলা বা শিমের মতো খাবার ভরপেট খাবার খাওয়ার মতো অনুভূতি ৩০ শতাংশের বেশি বাড়ায়। এ জাতীয় খাবারের মধ্যে আরও রয়েছে শস্য, খোসাসহ রান্না করা আলু বা শাকজাতীয় সবজি, বাদাম, তেলবীজ জাতীয় খাদ্য ও ফলমূল। হোলগ্রেইন আটার রুটি ছাড়াও বাদামি চালেও ভালো আঁশ থাকে।
তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পানের পাশাপাশি লবণাক্ত খাবারের ব্যাপারে বিশেষ সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ ব্রিজেট বেনেলাম। তিনি বলেন, লবণাক্ত খাবার পানির তৃষ্ণা বৃদ্ধি করে। আর সারাদিন পানি পান করা যাবে না, এ পরিস্থিতিতে তৃষ্ণা হওয়ার মতো অবস্থায় অবশ্যই কেউ চাইবে না। অর্থাৎ, এই পুষ্টিবিদের ভাষ্য―রোজা রাখার জন্য সেহরিতে লবণাক্ত খাবার খেলে দিনভর পানি তৃষ্ণা পাবে। এতে আরও কষ্ট হবে। তাই সেহরিতে লবণাক্ত খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
Comments