শীতকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা ভালো নাকি খারাপ
বেশ জাকিয়ে বসেছে শীত। এই সময় শরীরের বাড়তি যত্ন নিতে হয়। অনেকেই আছেন ঠান্ডার কারণে প্রতিদিন গোসল করেন না শীতের দিনে। আবার কেউ আছেন যারা গরম পানি ব্যবহার করেন। তবে এমন অনেকেই আছেন যারা আবহাওয়া প্রচণ্ড ঠান্ডা হলেও গরম পানি ব্যবহার করেন না। এই অভ্যাস শরীরে কেমন প্রভাব ফেলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি।
ডিসেম্বরে শেষ দিকে এসে প্রায় বেশিরভাগ মানুষ গরম পানি দিয়েই গোসল সারেন। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। একাধিক গবেষণাও করা হয়েছে শীতের দিনে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার বিষয়টি নিয়ে। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, শীতে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এতে নানা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
পুরো শীতকাল জুড়েই নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। সর্দি-কাশি থেকে গাঁটে গাঁটে ব্যথা, অসুস্থতায় জর্জরিত হয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকদের মতে, শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে কমে যায়। আর সেই কারণেই রোগবালাই সহজেই বাসা বাঁধে শরীরে। ২০১৬ সালে 'প্লস ওয়ান'-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, শীতে ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে এই মৌসুমে রোগের ঝুঁকি ২৯ শতাংশ কমে যায়। তা ছাড়াও, ঠান্ডায় শীতল পানিতে গোসলের আরও অনেক উপকারিতা আছে।
এছাড়াও ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে শরীরে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না। প্রদাহজনিত সমস্যাও দূরে থাকে। শীতে ঠান্ডা জলে স্নান করার এমন বিবিধ উপকার আছে। তবে এই অভ্যাসে একটু রাশ না টানলেও মুশকিল হতে পারে বলে মত চিকিৎসকদের। বিশেষ করে ত্বকে এর প্রভাব পড়তে পারে। চর্মরোগ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শীতে এমনিতেই ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে সেই সমস্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
শীতকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার অপকারিতা: শীতে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার বেশ কিছু উপকারিতা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তারা এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়েও সাবধান করেছেন। চিকিৎসকরা বলেন শীতকালে ঠান্ডা পানিতে গোসল করা বিপজ্জনক হতে পারে। ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে ব্রেইন স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। ঠান্ডা পানি শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং পেরিফেরাল ভাস্কুলার রেজিস্টেন্স বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে ধমনীর রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং ব্রেইন অ্যাটাকের সম্ভাবনা তৈরি হয়। যাদের হৃদরোগ আছে, তাদের জন্য হঠাৎ করে ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আসা খুবই ক্ষতিকর।
ঠান্ডা পানির কারণে অনেকের শরীর শকে চলে যায় এবং ত্বকের রক্তনালী সংকুচিত হয়ে যায়, ফলে শরীরে রক্ত চলাচল ধীর হয়ে যায়। এর ফলে হৃদপিণ্ডকে পুরো শরীরে, বিশেষ করে মস্তিষ্কে রক্ত পাম্প করার জন্য বেশি কাজ করতে হয় এবং দ্রুত স্পন্দিত হতে হয়। দিল্লির কৈলাস দীপক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের পরিচালক ড. বিকাশ গুপ্ত বলেন, শীতকালে আমরা ব্রেইন স্ট্রোকের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়তে দেখেছি। ঠান্ডার মাসগুলোতে আমাদের রক্ত ঘন হয়ে যায় এবং রক্তনালী সাময়িকভাবে সংকুচিত হয়ে যায়, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে এবং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা হেমোরেজিক স্ট্রোক নামে পরিচিত। এটি অক্ষমতা সৃষ্টি করতে পারে এবং এমনকি প্রাণঘাতীও হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ: শীতের দিনে গোসল করার বিষয়ে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন। কৈলাস দীপক জানান, শীতে একেবারে ঠান্ডা পানিতে গোসল না করাই ভালো। হালকা গরম পানি নেয়া উচিত। বিশেষ করে যখন প্রচণ্ড ঠান্ডা পরে তখন আরও সাবধান হতে হবে। এই নিয়ম মেনে চললে বেশ উপকার মিলবে।