যেসব অভ্যাস আপনার শিশুর স্বাস্থ্য ভালো রাখবে
সকালে উঠেই স্কুলের তাড়া। বাড়ি ফিরেই সাঁতার, আঁকাআঁকি, নাচ,গান বা টেবিল টেনিস খেলা সবই চলে। ছোটদেরও যেন এক মুহূর্ত শ্বাস ফেলার সময় নেই। তার উপরে প্রতিদিনের তাড়াহুড়োয় সুষম খাবারও বাদ যায় অনেকসময়েই। বাইরের খাবার অথবা কেক-পেস্ট্রি, চিপস টিফিন বাক্সে ভরে দেন অনেক অভিভাবকই। ফলে ছোট থেকেই অনেকে পেটের গোলমাল, কোষ্ঠকাঠিন্য, সর্দি, হাঁচি, স্কিন র্যাশের মতো সমস্যায় ভুগতে থাকে।
পাঁচ বছর বয়স থেকে যৌবনে পর্দাপন পর্যন্ত (১১ বছর থেকে ১৮ বছর) শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কেবল খাওয়াদাওয়াই নয়, এমন কিছু অভ্যাস রপ্ত করাতে হবে যাতে অসুখবিসুখ ধারেকাছেই না ঘেঁষে।
'আমেরিকান জার্নাল অফ লাইফস্টাইল মেডিসিন' বিজ্ঞান পত্রিকায় এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন লেখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ঘুম ভাঙার এক ঘণ্টার মধ্যে কয়েকটি কাজ নিয়ম করে করালে শিশুর শরীর ভালো থাকবে। বুদ্ধির বিকাশ হবে। স্মৃতিশক্তিও বাড়বে।
কী কী অভ্যাস রপ্ত করাবেন বাবা-মায়েরা?
হেলথ ড্রিঙ্কের বদলে ডিটক্স পানীয় : সকাল সকাল হেলথ ড্রিঙ্কস না দিয়ে বরং উষ্ণ পানি আধখানা পাতিলেবুর রস চিপে শিশুকে খাওয়াতে পারেন। তাতে এক চামচ মধুও দেয়া যেতে পারে। সকালে এই পানীয় খেলে শিশুর সর্দিকাশির সমস্যা দূর হবে, হজমশক্তি বাড়বে। ঠান্ডা লাগার ধাত থাকলে এই পানীয় নিয়মিত খাওয়া ভালো। তবে শিশুর যদি অম্বলের সমস্যা থাকে, তা হলে মৌরি-মেথি ভেজানো জলও খাওয়াতে পারেন। পেট ঠান্ডা থাকবে।
১৫ মিনিট হাঁটা : শিশুর বয়স অনুযায়ী শরীরচর্চা করাতে হবে। ২-৫ বছরের শিশু হলে তাকে নিয়মিত সকালে হাঁটতে নিয়ে যান। কাছাকাছি মাঠ বা পার্ক থাকলে খুবই ভালো হয়। প্রকৃতির মাছে যতটা সময় কাটাবে, ততই তা শিশুর শরীর ও মনের জন্য ভালো। বয়স পাঁচ বছরের বেশি হলে তখন ধীরে ধীরে হালকা যোগাসন অভ্যাস করাতে পারেন। তবে অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিয়ে। সকাল সকাল শরীরচর্চার অভ্যাস রপ্ত করাতে পারলে শিশুর পেশিশক্তি বাড়বে। চট করে অসুখবিসুখও হবে না।
শ্বাসের ব্যায়াম : ছোট থেকে অভ্যাস করাতে পারলে ফুসফুসের জোর বাড়বে। লম্বা করে শ্বাস নেয়া ও ছাড়া- শুরুতে এই ব্যায়াম করাতে পারেন শিশুকে। ধীরে ধীরে অনুলোম-বিলোম বা কপালভাতির মতো ব্যায়াম সে অভ্যাস করতে পারে। অনেক শিশুর হাঁপানি বা অ্যালার্জির ধাত থাকে। শ্বাসের ব্যায়াম অভ্যাস করতে পারলে এই সব সমস্যা দূর হবে।
শিশুরা এমনিতেই চঞ্চল হয়। প্রথম প্রথম এক জায়গায় বসতে চাইবে না। কিন্তু ধীরে ধীরে অভ্যাস করালে অন্তত ১০ মিনিট শান্ত হয়ে বসা শিখে যাবে। নিয়মিত ধ্যানে মনোযোগ, একাগ্রতা বাড়বে। বুদ্ধিরও বিকাশ হবে। পড়াশোনায় মন বসবে। নিজের লক্ষ্য স্থির করতে পারবে।
পুষ্টিকর প্রাতরাশ : দু'বছরের পর থেকে ধীরে ধীরে স্কুলে যাওয়া শুরু হয় শিশুর। তখন খাবার নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে অভিভাবকদের। শিশুর কোনও খাবারে অ্যালার্জি আছে কি না, তা-ও খেয়াল করতে হবে। এই সময়ে খাদ্যতালিকা এমন হতে হবে, যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটায় যথাযথ ভাবে। সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে শিশুকে প্রাতরাশ খাইয়ে দিন। মাখন পাউরুটি, দুধ দিয়ে কর্নফ্লেক্স বা দুধ-ওট্স দিতে পারেন শিশুকে। উপরে ছোট ছোট করে ফল কেটে ছড়িয়ে দিন। এতে অনেক ক্ষণ পেট ভর্তি থাকবে। চাল-ডাল দিয়ে খিচুড়িও রেঁধে দিতে পারেন। বাইরের খাবার একেবারেই দেবেন না।
ঘরের টুকিটাকি কাজ : ছোট থেকেই ঘরের টুকিটাকি কাজের অভ্যাস করান শিশুকে। যেমন ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা পরিষ্কার করা, পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা। এখনকার বেশির ভাগ শিশুই ঘুমচোখ খুলেই মোবাইল চায়। এই প্রবণতা বন্ধ করতে সকাল সকাল গাছে জল দেয়ার অভ্যাস করান শিশুকে। কম যত্নে ভাল থাকে এমন কিছু গাছ কিনে দিন। পরিচর্যা কী ভাবে করতে হয় তা শিখিয়ে দিন। এতে শিশুর মোবাইলের নেশা যেমন দূর হবে, তেমনই দায়িত্ববোধও বাড়বে।