বিয়ের সঙ্গে বার্ধক্যের সম্পর্ক কোথায়?
জীবনচক্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপের নাম বিয়ে। জীবনের চলার পথ সহজ নয়। আর সেই পথ চলার স্থায়ী সঙ্গী হিসেবে পাশাপাশি থাকেন স্বামী-স্ত্রী। বিয়ে মানে কিন্তু কেবল একসঙ্গে থেকে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া নয়। এর অর্থ এবং প্রভাব আরও বেশি। এমনকি বার্ধক্যের সঙ্গেও বিয়ের যোগসূত্র রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে এমনটাই জানা যায়।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন মতে, অনেকেই বলেন বিয়ের পর বয়স বেড়ে যায় আর কেউ ভিন্ন কথা বলেন। সম্প্রতি প্রকাশিত আন্তর্জাতিক সাময়িকী ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল ওয়ার্ক-এ প্রকাশিত একটি গবেষণা থেকে জানা যায় বিবাহিত পুরুষদের বার্ধক্য ধীর গতিতে হয়, কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম। গবেষণাটি বলছে বিবাহিত পুরুষরা অবিবাহিতদের তুলনায় ধীরে বুড়ো হন। তবে এই প্রভাব নারীদের ক্ষেত্রে তেমন দেখা যায়নি।
ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল ওয়ার্ক-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, বিবাহিত পুরুষরা অবিবাহিতদের চেয়ে ধীরগতিতে বুড়িয়ে যান। যার অর্থ বিবাহিত পুরুষের তারুণ্যের স্থায়িত্ব বেশি। তারা বয়স বাড়লেও বুড়িয়ে যান না। তবে শর্ত একটাই সেটা হলো বিয়ে ভালোভাবে টিকতে হবে। সফল দাম্পত্যের কারণে পুরুষেরা উৎফুল্ল থাকেন আর সে কারণেই তারা দীর্ঘ বছর তারুণ্য ধরে রাখতে পারেন। তবে বিবাহবিচ্ছেদ, সঙ্গীর মৃত্যু বা আলাদা হয়ে যাওয়ার ঘটনা তাদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নারীদের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বিয়ে করেননি, তারা বিবাহিত বা ডিভোর্সপ্রাপ্ত নারীদের তুলনায় বেশিদিন তারুণ্যে ধরে রাখতে পারেন। বিশেষ করে, ডিভোর্সপ্রাপ্ত বা বিধবা নারীরা বেশি সমস্যায় পড়েন। যার অর্থ বিয়ের পর বেশিরভাগ নারীর মধ্যে তারুণ্যে হারিয়ে যেতে থাকে। বিবাহিত নারীরা যদি অসুখি হন তাহলে এই সমস্যা আরও বেশি হয়। মানসিক অশান্তির ছাপ তাদের মধ্যে পড়ে। বিয়ে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, এমন ধারণা আগের অনেক গবেষণাতেই উঠে এসেছে। তবে বিয়ের পর আপনি মানসিকভাবে ভালো আছেন কিনা সেই বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ।
বিয়ের সঙ্গে বুড়িয়ে যাওয়ার সম্পর্ক: বিয়ের সঙ্গে বার্ধক্যের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটা জানতে কানাডায় একটি গবেষণা করা হয়। এই গবেষণায় ৪৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষ অংশ নিয়েছিল। বার্ধক্য বিবাহিত মানুষের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলে জানতে তাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগীয় স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকগুলো ভালোভাবে দেখা হয়। বিশেষজ্ঞরা টানা ২০ বছর তাদের খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর গবেষণাটির ফলাফল সামনে আনেন। গবেষণাটির ফলাফল বিশেষজ্ঞদের চমক দিয়েছিল। তারা দেখেন যে বিয়ের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের সম্পর্ক রয়েছে আর এ কারণেই বিয়ের সঙ্গে তারুণ্য এবং বার্ধক্যের সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষণাটির প্রধান ছিলেন টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ লাইফ কোর্স অ্যান্ড এজিং-এর গবেষক মাবেল হো। তিনি বলেন, আমি ২০ বছর ধরে বয়স্কদের সেবায় কাজ করছি। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু মানুষের জীবনে বার্ধক্য স্বাভাবিকভাবেই হয় আর কারোর ক্ষেত্রে দেখা যায় তারা দীর্ঘদিন তারুণ্য ধরে রাখতে পারেন। আর এর মূল রহস্য জীবনযাপনের ধারা এবং মানসিকভাবে ভালো থাকা। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব আমাদের শরীরে দেখা যায়।