যুদ্ধের সময় কেন সোনার দাম বাড়ে?
যুদ্ধ ও রাজনৈতিক সংঘাতের সময় বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ বাজার ছেড়ে নিরাপদ সম্পদে বিনিয়োগ করতে চায়। সোনা হলো অন্যতম নিরাপদ বিনিয়োগ, কারণ এটি সংকটময় পরিস্থিতিতে তার দাম ধরে রাখতে সক্ষম।
যুদ্ধের কারণে প্রায়ই এক বা একাধিক দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার ফলে তাদের মুদ্রার দাম কমে যায়। মুদ্রার অবমূল্যায়ন হলে সোনাকে স্থিতিশীল ও মূল্যবান বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে সোনার দাম উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার এবং মুদ্রা থেকে সরে এসে সোনার দিকে ঝুঁকেছিল, যার ফলে সোনার চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়।
মধ্যপ্রাচ্য হলো বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী অঞ্চল। সেখানে যুদ্ধ বা সংঘাত হলে তেলের সরবরাহ বিঘ্নিত হয় এবং তেলের দাম বেড়ে যায়। তেলের দাম বাড়ার ফলে বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। যেহেতু সোনা সাধারণত মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাই এর চাহিদা ও দাম বেড়ে যায়।
১৯৯০-১৯৯১ সালের গালফ যুদ্ধের সময়, ইরাকের কুয়েত আক্রমণের ফলে বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। এই সময়ে সোনার দাম বেড়ে যায় কারণ বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য সোনা কিনতে শুরু করে।
সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধ তার একটি বড় উদাহরণ, গেলো ২৯ অক্টোবর বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স গোল্ডের দাম ২৭৭৪ ডলার উঠে, যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করে, যা সোনার দাম বাড়িয়ে দেয়। অস্থিরতার সময়ে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিকল্প খোঁজে, এবং সোনা তাদের জন্য একটি প্রমাণিত নিরাপদ বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
যুদ্ধ সরবরাহ চেইন ব্যাহত করে এবং উৎপাদন ব্যয় বাড়ায়, যা পণ্যের দাম বাড়ায়। মুদ্রাস্ফীতি বাড়লে সোনার দামও বৃদ্ধি পায়, কারণ সোনা ঐতিহ্যগতভাবে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
চীন ও রাশিয়া বিগত এক দশকে সোনার মজুদ বৃদ্ধি করেছিল, যা বাজারে সোনার দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় এই মজুদ কৌশল আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এই সমস্ত উদাহরণ প্রমাণ করে যে যুদ্ধ এবং সংকটময় পরিস্থিতি সোনার চাহিদা বাড়িয়ে তোলে এবং এর ফলে এর মূল্য বেড়ে যায়।