বগুড়ার যমুনায় নৌ-বন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে সার্ভে জাহাজ

বগুড়া সারিয়াকান্দির যমুনা নদীতে নৌবন্দর গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় কাজ এগিয়ে চলেছে। নদী বন্ধের কাজ এগিয়ে নিতে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে ইতিমধ্যে এসেছে বিআইডব্লিউটিএ ইনল্যান্ড সার্ভে ভেসেল ঝিনাই-২। বগুড়া জেলার ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে অতিদ্রুত সারিয়াকান্দিতে নৌবন্দর গড়ে তোলার জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এর আগে বিগত ২০২১ সালের ১২ আগস্ট মাসে বগুড়া-জামালপুর রুটের ফেরি চলাচল শুরু হয়। এরপর গত ২৩ আগস্ট ইঞ্জিন বিকল হওয়ায় বগুড়া-জামালপুর রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আট দিন পর ৩১ আগস্ট ইঞ্জিন মেরামত করে আবারও ফেরি চলাচল শুরু হয়েছিল। পরে একই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ফেরি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বগুড়ার সারিয়কান্দিতে যমুনা নদীর মাঝে বিকল হয়ে যায়। এরপর থেকেই সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে অদ্যবধি।
জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই বগুড়াসহ রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌরুট ব্যবহার করে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করেন। এ নৌপথ দিয়ে জামালপুর হয়ে ঢাকার দূরত্বও কম। তাই সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌরুট ব্যবহার করে প্রতিদিন কয়েক হাজার যাত্রী বগুড়া এবং জামালপুর জেলায় যাতায়াত করেন। তারা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকা দিয়ে উত্তাল যমুনা পাড়ি দেন। এসব নৌকাগুলোর যাত্রী ছাউনি না থাকায় যাত্রীরা প্রখর রোদে পুড়ে বা বৃষ্টিতে ভিজে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়ে সবসময় যাতায়াত করেন।
যাত্রীদের এসব কষ্টের কথা চিন্তা করে গত কয়েকবছর আগে এ নৌরুটে সি-ট্রাক সার্ভিস চালু করেন বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যমুনার নাব্যতা সংকটে এবং সি-ট্রাকের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অব্যাহত লোকসানে বন্ধ হয়ে যায় এই সার্ভিসটি।
অথচ এই ফেরি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে সারিয়াকান্দির (সারিয়াকান্দি পয়েন্ট থেকে) দূরত্ব কমবে প্রায় ৮০ কিলোমিটার। তবে যখন ফেরিটি চালু ছিল থাকাকালীন সময়ে যমুনার দুই পাড়ের মানুষের মধ্যে যেন খুশির সীমা ছিলনা। তাছাড়া নতুন এ সার্ভিস চালু হলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের দূরত্ব যেমন কমবে, তেমন খরচের দিক থেকেও হবে সাশ্রয়ী। একই সঙ্গে যমুনা সেতু দিয়ে পারাপারের ভোগান্তিও কমবে অনেকটা বলে আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন যমুনার দু'পাড়ের মানুষেরা।
সারিয়াকান্দিতে কয়েকবছর ধরেই পলিমাটি জমে যমুনা নদীর অববাহিকায় বিশালাকার কৃষিজমি সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে প্রতিবছর বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর পরিমাণে ফসল ফলে। পরিবহন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এসব ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে প্রতিবছরই বঞ্চিত হন এলাকাবাসী। উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করে ফসলের ন্যায্য মূল্য পেতে এবং সারিয়াকান্দি-মাদারগঞ্জ নৌরুটের লাখো যাত্রীদের সুবিধার্থে সারিয়াকান্দিতে নৌবন্দর চান এলাকাবাসী। যা তাদের বহুদিনের স্বপ্ন।
এলাকাবাসীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে সারিয়াকান্দিতে নৌবন্দর গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজ। তার উপর ভিত্তি করে গত কয়েকমাস আগে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডোর আরিফ আহম্মেদ মোস্তফা সারিয়াকান্দি নৌঘাট পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি এখানে নৌবন্দর গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্যতা যাচাই করতে একটি সার্ভে প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএ ইনল্যান্ড সার্ভে ভেসেল ঝিনাই-২ জাহাজটি গত কয়েকদিন ধরেই সারিয়াকান্দি নৌঘাটে অবস্থান করছে এবং তারা তাদের জরিপ কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
সারিয়াকান্দি এলাকাবাসী শাহাদাৎ হোসেন সনি বলেন, সারিয়াকান্দিতে দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের কথা ছিল সেটি বাস্তবায়ন হয়নি, এখানে একটি সার কারখানা স্থাপন করারও কথা ছিল কিন্তু তাও বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের সারিয়াকান্দি বাসীর সর্বশেষ দাবি এখানে নৌবন্দর স্থাপন করা। এটি দ্রুত বাস্তবায়ন করে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করা আমাদের এলাকাবাসীর জোর দাবি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, এলাকাবাসীর সুবিধার কথা বিবেচনা করে বগুড়া জেলা প্রশাসক মহোদয় সারিয়াকান্দিতে নৌবন্দর গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার ভিত্তিতে বিআইডব্লিউটিএ মাননীয় চেয়ারম্যান মহোদয় সারিয়াকান্দি নৌঘাট পরিদর্শন করেছেন এবং নৌবন্দর গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। সবঠিক থাকলে ইনশাআল্লাহ সারিয়াকান্দিতে নৌবন্দর হবে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, সারিয়াকান্দিতে নৌবন্দর গড়ে উঠলে এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলো সহ রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিকল্প পথে সহজে যোগাযোগ করা সম্ভব। প্রসার ঘটবে ব্যবসা বানিজ্যের। চরাঞ্চলের কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পেয়ে সমৃদ্ধ হবেন, এগিয়ে যাবে বগুড়ার অর্থনীতি।
Comments