পাখি হত্যার জন্য নিজেদের দায় দিলেন জয়া
নতুন বছর আসতে ব্যবধান মাত্র এক দিনের। চলতি বছরকে বিদায় জানিয়ে স্বাগতম জানাতে প্রতিবছরই নানান আয়োজন করা হয় ৩১ ডিসেম্বর রাতে। রাত ১২টা বাজতেই ইংরেজি নববর্ষে আতশবাজি ও পটকা ফোটানো হয়। এতে অনেক সময় বিপাকে পরতে হয় সাধারণ মানুষকে। এছাড়াও প্রাণীকুলও সংকটের মধ্যে দিয়ে যায় একদিনের এই আয়োজনে। আতশবাজি ও পটকা ফোটানোর শব্দে অত্যন্ত আতঙ্কের মাঝে কাটে শিশু-নবজাতকদের। শ্রবণজনিত সমস্যা থেকে শুরু করে মানসিক ব্যধিরও শিকার হয় তারা এই এক রাতেই। এমনকি অনেক পাখিও মারা যায়। সেইসঙ্গে বিভিন্ন পশুও বিপদে পরে।
বিষয়টি নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে সরকার থেকে শুরু করে বহু সামাজিক কিংবা প্রাণী কল্যাণ সংগঠনগুলো সচেতনতার বার্তা দিচ্ছে। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগেও সামাজিক মাধ্যমে আতশবাজি-ফানুস তাণ্ডবের ভয়াবহতা তুলে ধরছেন। দেশের শোবিজ তারকারাও যে যার মতো করে বার্তা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন; তাদের একজন অভিনেত্রী জয়া আহসান।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক মাধ্যমে এক দীর্ঘ পোস্ট লেখেন জয়া। সেখানে উঠে আসে- নতুন বছর বরণকে কেন্দ্র করে প্রাণিহত্যার দিকটি। সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে এই হত্যার দায় নিজেদের বলেও সতর্ক করেন অভিনেত্রী।
জয়া আহসান বলেন, মানুষদের মতো পাখিদের কোনো ক্যালেন্ডার নেই। তারা থার্টি ফার্স্ট চেনে না। অন্য আর দশটা সন্ধ্যার মতোই তারা ফিরে যায় যে যার নীড়ে, রাতে ঘুমিয়ে পরদিন সকালে উঠে আবার কিচিরমিচির করবে বলে। কিন্তু সেই রাতে কী যেন হয় মানুষের। তারা ঘুমায় না। তীব্র হট্টোগোল শুরু হয়, যেন যুদ্ধ! বিকট শব্দে পাখিদের ঘুম ভেঙে যায়। তারা দেখে আকাশে শত শত ফানুস উড়ছে। হঠাৎ একটা ফানুস এসে পুড়িয়ে দেয় গাছে থাকা সমস্ত পাখির ঘর। কেউ কেউ পুড়ে মরে, কেউবা আতঙ্কিত হয়ে আকাশে উড়াল দেয়। কিন্তু আকাশটাই তো নিরাপদ না।
অভিনেত্রী ঐ পোস্টে পাখিদের বিষয়টি নিয়ে বলেন, কোনো কোনো পাখি মারা পড়ে তীব্র শব্দে, আবার কারও গায়ে লাগে আতশবাজি। এরপরও যেসব ভাগ্যবান পাখি তখনও বেঁচে থাকে, তাদের কেউ কেউ আতঙ্কিত হয়ে বিল্ডিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ হারায়।
জয়া পাখির মৃত্যুর বিষয়টি সামনে এনে আরও বলেন, জানি এই শহরে প্রচুর মানুষও মারা যায়, কারও কারও কাছে পাখির মৃত্যু আদিখ্যেতা মনে হয়। কিন্তু মানুষের মৃত্যু দেখার জন্য তো সংস্থা আছে, সংখ্যা হিসাব করার প্রতিষ্ঠান আছে। আছে আহত মানুষের চিকিৎসা দেয়ার হাসপাতাল। কিন্তু পাখিদের এসব কিছুই নেই। তাই পাখিরা মারা গেলে ডেথ সার্টিফিকেট হয় না, জানা যায় না মৃত্যুর কারণ। এমনকি মৃত পাখিদের সংখ্যাটাও জানি না আমরা কেউ। ফলে এই শহরের মতোই পাষণ্ড নাগরিকেরা ভাবে, পাখির মৃত্যু? ও আর এমন কী! কিন্তু মানুষ কেন ভাবে না যে প্রতিটি প্রাণের গুরুত্ব সমান।
দুই বছর আগে আতশবাজির শব্দে শিশু উমায়েরের মৃত্যুর প্রসঙ্গও তোলেন জয়া। তিনি বলেন, শুধু পাখির কথা কেন, এই শহরের কুকুর-বিড়াল-মুরগি-কীটপতঙ্গসহ সবাই-ই অস্থির হয়ে যায় নগরবাসীর আতশবাজি আর ফানুস উৎসবে। এমনকি ডিমের ভেতর বাচ্চা পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়। আর মানুষ? তারা তো মানুষের কথাও ভাবে না। ২০২২-এর জানুয়ারির ১ তারিখ যখন নগরবাসী সারারাত আতশবাজি উৎসব করে ঘুমাচ্ছে তখন মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল ৪ মাস বয়সী উমায়ের। একসময় সে পরাজিত হয় এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ছোট্ট উমায়েরের এই মৃত্যুর দায় কেন এই নগরবাসী নেবে না? আপনারা যারা আতশবাজি ফুটিয়েছিলেন তারা কেউ কি এই দায় থেকে মুক্ত?
ফেসবুক পোস্টে জয়া আরও বলেন, এ বছরও হয়ত আপনারা আতশবাজি আর ফানুসের ঝলকানিতে নতুন বছরকে বরণ করে নেবেন। উৎসবের নামে এই তাণ্ডবলীলা চালানোর সময় কি এই অসহায় কুকুর-বিড়াল-পাখিসহ অসহায় প্রাণীদের করুণ মুখগুলো আপনাদের মনে পড়বে? আপনাদের কি মনে পড়বে শিশু উমায়েরের নিষ্পাপ মুখটির কথা? যদি এদের কারও কথা আপনার মনে না পড়ে, অথবা মনে পড়ার পরও যদি আতশবাজি আর ফানুসের তাণ্ডব চালিয়ে যান, তাহলে জেনে রাখুন, এই প্রাণী হত্যার দায় আপনারও।