ফারুকীকে সংস্কৃতি উপদেষ্টা করাটা যেভাবে দেখছেন আশফাক নিপুন
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন নির্মাণের মাধ্যমে তারকা খ্যাতি লাভ করা পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আর উপদেষ্টা হওয়ার পর থেকেই তাকে নিয়ে নানা সমালোচনা ও চর্চা হচ্ছে। এমনকি পদত্যাগের দাবিও উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।
কেউ কেউ আবার আওয়ামী লীগের দোসর বলেও অভিহিত করেছেন নির্মাতা ফারুকীকে। এ নিয়ে অবশ্য একাধিকবার নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন তিনি। কিন্তু তাতেও সমালোচনা থেমে থাকেনি। এবার তার পাশে দাঁড়ালেন 'মহানগর' খ্যাত নির্মাতা আশফাক নিপুন।
রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৫টায় ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক স্ট্যাটাসে আশফাক নিপুন লেখেন, 'মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে আওয়ামী দোসর বলা হাস্যকর। দুঃখজনক না বলে হাস্যকর বললাম কারণ খোদ কট্টর আওয়ামী শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে ক্যাডার বাহিনী পর্যন্ত তাকে নিজেদের দলে দেখতে আগেও স্বাচ্ছন্দবোধ করেন নাই, এখনো করবেন না। বিশ্বাস না হলে আপনার পাশের আওয়ামীজনকে জিজ্ঞেস করে দেখেন? ছ্যাঁত করে উঠবে। আর উনার পুরনো কিছু স্ট্যাটাস, ছবিই যদি অকাট্য প্রমাণ হয়, তাহলে তার বিপরীতে গত ১৫ বছরে, বিশেষ করে জুলাই আন্দোলনে নিরন্তর আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারকে সমালোচনা করে উনার ফেসবুক পোস্টও আমলে নেয়া হোক? যেগুলো নিয়ে আওয়ামী শিল্পী সমাজ থেকে শুরু করে খোদ পলাতক প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত চূড়ান্ত বিরক্ত ছিলেন? অথবা আওয়ামী সরকারের আমলে দুইবার উনার সিনেমা আটকে দেয়া আমলে নেয়া হোক?'
আশফাক নিপুন লিখেছেন, 'কয়েকটা ফেসবুক পোস্ট আর একটা/দুইটা ছবি যদি কোনো দলের দোসর হওয়ার, সহমত ভাই হওয়ার চূড়ান্ত যোগ্যতা হয়, তাহলে গত ১৬ বছরে যেসব শিল্পী নিজেদের 'আপা'র কাছের লোক প্রমাণে, প্লট, পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য বাগানোর জন্য ভুয়া নির্বাচনী প্রচারণা থেকে শুরু করে আপার সামনে, পেছনে হাত কচলে, তৈলমর্দন করতে করতে আমাকে আর আমিমনাদের দিনরাত শূলে চড়াতেন, তাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা। অনেক বেশি শারীরিক কষ্ট করলেন এক জীবনে, বুঝতেও পারেন নাই এর ০ দশমিক ১ শতাংশ করলেও খুশিতে খুশিতে আপার দোসর ট্যাগ খেয়ে যাতে পারতেন এখন।'
এছাড়া নির্মাতা ফারুকীকে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা করার ব্যাখ্যাও জানিয়েছেন আশফাক নিপুন। এ ব্যাপারে তিনি লিখেছেন, 'ফারুকীর সংস্কৃতি উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে প্রচুর সমালোচনা। উনি সংস্কৃতির লোক তাই উনাকে এই মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বানানো। উনাকে তো অর্থ, বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র, আইন বা স্বাস্থ্য উপদেষ্টা করা হয়নি। উনি দেশ-বিদেশে সংস্কৃতি অঙ্গনের বিখ্যাত মানুষ, জুলাই আন্দোলনেরও বহুকাল আগে থেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারের সমালোচনায় সরব, স্পিরিটে তরুণ, তাই হয়তো উনার এই নিয়োগ। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই আন্দোলনের স্পিরিট, ডকুমেন্টস ধারণ করার মতো কাজ উনি যদি করে দেখাতে না পারেন, তাহলে আমিও উনার সমালোচনা করব। ১০০ বার করব। কিন্তু কাজটা তো করে দেখানোর সুযোগ দিতে হবে আগে? সেটাও দেয়া যাবে না কেন? শত শত ফ্যাসিস্ট সমালোচনার বাইরে উনার কয়েকটা ফেসবুক পোস্ট বা পলক সাহেবের সঙ্গে একটা ছবির কারণে?'
তিনি লিখেছেন, 'ছোট মুখে বড় একটা কথা বলি তাহলে, বেয়াদবি মাফ করবেন। এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সম্পৃক্ত অনেককেই আমরা চিনি, জানি যারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুইভাবেই জীবনের কোনো না কোনো সময় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিল। কেউ ইচ্ছাকৃত, কেউ অনিচ্ছাকৃত, কেউ কৌশলে আর কেউ বাধ্য হয়ে ছিল। কিন্তু আন্দোলনের স্পিরিটে ফ্যাসিস্ট তাড়াতে সবাই এক হয়ে গিয়েছিল। এই ঐক্যই ছিল আমাদের শক্তি। এখন এই ডিভাইড অ্যান্ড রুল পলিসি কেন? কার বা কাদের সুবিধার জন্য?'
সবশেষ আশফাক নিপুন লিখেছেন, 'ফারুকীর কাজের সমালোচনা ১০০ বার করেন। সেটা উনার ওপর অর্পিত দায়িত্ব উনি পালন করতে না পারলে করেন। যৌক্তিকভাবে করেন। কিন্তু উনি যা না, যা উনি বলেন নাই, সেটার পেছনে অযৌক্তিক সমালোচনা করে শক্তি নষ্ট কইরেন না। আমি বিশ্বাস করি, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এই মহান আন্দোলনকে ডকুমেন্টেড করার জন্য উনার সেবাবলে সর্ব্বোচ্চটাই ঢেলে দেবেন। সেই সক্ষমতা উনার এবং উনার টিমের আছে। আমি সাগ্রহে তাকিয়ে আছি উনি আমাদের কি কি উপহার দিতে পারেন সেদিকে। না পারলে তখন উনাকে গালমন্দ কইরেন।'