কুয়াকাটা সৈকতের সাগরে ভেসে গেছে ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার রাস্তা

কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিধ্বস্থ হয়ে গেছে কুয়াকাটা সৈকত লাগোয়া সী-বিচ সড়ক। বঙ্গোপসাগরে সৃস্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ১৩'শ মিটার সড়কের এক তৃতীয়াংশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে দুই ঘন্টার জলোচ্ছাস তান্ডবে এমন বেহাল দশায় পড়েছে সড়কটি। তৎকালীন ছাত্রলীগ ও শ্রমিকলীগের বানিজ্যিক প্রকল্পে এমন ধ্বস নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়সহ পর্যটকরা।
সৌন্দর্য বর্ধনসহ সৈকতে পর্যটকদের চলাচলের সুবিধায় কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে হোটেল সিভিউ থেকে জাতীয় উদ্যান (ঝাউবন) পর্যন্ত ১৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় কুয়াকাটা পৌরসভা। কোন ধরনের ফিজিব্যালিটি স্টাডি ছাড়াই সাগরের ওয়াটার লেভেলে র্নিমাণ করা হয়েছে এই সড়ক।
৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পের র্নিমাণ কাজ পায় পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী কুয়াকাটা পৌর শ্রমিকলীগের সদস্য সচিব সগীর মোল্লা'র মোল্লা ট্রেডার্স, আরেক সহযোগী পৌর শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়ক বেলাল হোসেনে'র আবরার ট্রেডার্স ও সাদ্দাম মাল'র এস এম ট্রেডার্স। ইতিমধ্যে প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৫০লাখ টাকার বিল উত্তোলন করেছে প্রতিষ্ঠান তিনটি। শুরু থেকেই স্থানীয়রা এটিকে কুয়াকাটার সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বাণিজ্যিক প্রকল্প বলে আসছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, কাজের শুরু থেকেই ক্ষমতার জোরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন ইট, বালু দিয়ে নিম্নমানের র্নিমান কাজ করেছে। তৎকালীন পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। এনিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেকেই। কোটি টাকার প্রকল্পে এমন দায়িত্বহীনতা, স্বজনপ্রীতি ও পরিকল্পহীনতার প্রকৃত তদন্ত করে দৃস্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান তারা।
কুয়াকাটার পর্যটন ব্যবসায়ী হোসাইন আমির বলেন, পরিকল্পনাহীনভাবে গাইড ওয়ালছাড়া কাজ করায় রাস্তা ভেঙে পড়েছে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা ছাড়া সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দু:খজনক।
এসএম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাদ্দাম মাল দাবি করেন, আমি সরাসরি কাজ করিনি, রুহুল আমিন নামে একজনকে সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছি। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মোবাইল বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন বলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট তফসিল অনুযায়ী কাজ দেয়া হয়েছে। কাজ এখনো চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে তারা দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে। অনিয়মের দ্বায়দায়িত্ব ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে নিতে হবে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা যখনই দেখেছি কাজ খারাপ হচ্ছে তখন টাকা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে , নিম্ন মানের কাজ হয়েছে কিনা আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি কাজের মান কেমন হয়েছে দেখে সুপারিশ করবে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Comments