মোংলা বন্দরের জাহাজে ডাকাতির ঘটনা পূর্বপরিকল্পত!

মোংলা বন্দরের একটি বাংলাদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে ডাকাতির ঘটনায় তিনজন চোরাকারবারিকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। বুধবার দুপুরে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আটক হওয়া ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে, এটি ছিল একটি পূর্বপরিকল্পিত 'সাজানো' ডাকাতির ঘটনা—যাতে জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ারসহ নাবিকদেরও জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, ২৬ মে রাত আনুমানিক সাড়ে ৩টায় মোংলা পোর্ট সংলগ্ন বেইস ক্রিক এলাকায় নোঙররত 'এমভি সেঁজুতি' নামক জাহাজে প্রায় ১২ জন দেশীয় অস্ত্রধারী প্রবেশ করে। তারা জাহাজের ক্রুদের জিম্মি করে মেশিনারিজ মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। এরপর কোস্টগার্ড গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ২৭ মে রাতে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করে। উদ্ধার করা হয় লুট হওয়া ইঞ্জিন স্পেয়ার পার্টস, বিয়ারিং, ব্যাটারি ও চার্জারসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ।
আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বেতন না পাওয়ায় জাহাজের নাবিকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্থানীয় দুষ্কৃতকারীদের সঙ্গে মিলে 'ডাকাতির নাটক' সাজিয়ে মালামাল বিক্রির মাধ্যমে অর্থ ভাগাভাগির পরিকল্পনা করেন। এমনকি অতীতেও একই উদ্দেশ্যে জাহাজ থেকে পার্টস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান ও সাবেক নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তারা জানান, মালিক পক্ষকে ঘটনাস্থলে আসতে বললেও সাড়া মেলেনি।
বর্তমানে উদ্ধার হওয়া মালামাল জাহাজ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে এবং আটককৃতদের থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রমও শুরু হয়েছে। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের চিহ্নিত করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ ঘটনায় মালিকপক্ষের অবহেলা ও দায় এড়ানোর চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নাবিকদের দীর্ঘদিন বেতন না দেওয়া এবং জাহাজটিকে কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় রাখার বিষয়টিও তদন্তসাপেক্ষ বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জানিয়েছে, দেশের জলসীমায় নিরাপত্তা রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা কঠোরভাবে দমন করা হবে।
Comments