নিজেকে প্রকৌশলী দাবি ঠিকাদারের; বান্দরবানে আরসিসি রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম

বান্দরবানে আরসিসি সড়ক নির্মাণের আগে পুরনো ইট ময়লাযুক্ত সেলভেস ব্যবহারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া বিরুদ্ধে। তাছাড়া নির্মাণ কাজে বালু না দিয়ে কাঁদা মাটির ওপর নিম্নমানের ইট ও রাবিশ স্যালভিশ ইট বিছিয়ে দেয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ১২ মেইল চিম্বুক ওয়াই জংশন বাজারে আইসিসি রাস্তা নির্মানের আগে বালি না দিয়ে পুরনো স্যালভিশ ইট দিয়ে সলিং করা হচ্ছে। ইট সলিং কাজে বালু ফিলিং ব্যবহার না করার পাশাপাশি ওই রাস্তার ব্যবহৃত ময়লাযুক্ত রাবিশ ইট বিছিয়ে দিয়েছে নিয়োজিত শ্রমিকেরা। শুধু তাই নয় এর আগে ড্রেইন নির্মানের কাজে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছিল ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া। জেলা পরিষদে সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম যোগসাজশে এমন অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, থানচি সড়ক হতে দেওয়াই হেডম্যান পাড়া সকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হয়ে রুমা সড়ক পর্যন্ত ৫০০ মিটারে এডিবি প্রকল্পের আর সিসি রাস্তা নির্মাণ কাজ পেয়েছিলেন ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া। কিন্তু সেই সড়ক নির্মাণের পুরোটাই ব্যাপক অনিয়মে ভরা। অনিয়নে আশ্রয় নিতে ওয়াই জংশন বাজারের সভাপতি রেরং ম্রোকে নিজের আয়ত্তে নেন। এরপর শুরু ড্রেইন ও রাস্তা কাজে অনিয়মের সুযোগ। তাছাড়া শিফু বড়ুয়া এক সময় আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন দপ্তরে ঠিকাদার হিসেবে কাজ হাতিয়ে নিতেন। তাছাড়া তিনি লামা প্রেসক্লাবের সভাপতি প্রিয়দর্শী মেয়ে জামাই। তার কাজের কর্ম অনিয়ম ছাড়া নিয়মের কাজ করেন নাহ। বরংচ নিজ শুশুরে সাংবাদিক পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানা অনিয়মের আশ্রয় নেন। অনিয়মের বিষয়ে কথা বললেও সাংবাদিক পরিবার ও নিজেকে প্রকৌশলী হিসেবে দাবি করেন।
জেলা পরিষদ তথ্য মতে, ২০২৪-২৫ ও ২৬ অর্থ বছরে এডিবি প্রকল্পের ৫০০মিটার আরসিসি রাস্তা নির্মানের কার্যাদেশ পেয়েছিলেন প্রতিভা এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া। যার প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই চলছে অনিয়মে কাজ। এছাডা নিজেকে পরিচয় দেন সাংবাদিক পরিবার সদস্য হিসেবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চিম্বুক ওয়াই জংশন বাজারের উপর আরসিসি রাস্তার আগে চলমান রয়েছে ইট বিছানো কাজ। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্ন মানের ইট বিছানো হয়েছে ময়লাযুক্ত স্যালভিশ ইট। ইট বিছানো মধ্যখানে কোথাও ভাঙ্গা আবার কোথাও অর্ধেক আবার পুরোটাই ময়লাযুক্ত পুরনো ইট ব্যবহার করে হয়েছে। এসব ইট বিছানো কাজে কোনখানে বালু ব্যবহার করেনি। কাঁদা মাটি উপর ইট বিছিয়ে তড়িঘড়ি করে কাজ করছেন ঠিকাদার। ফলে ঠিকাদারের এমন অনিয়ম কাজ দেখে দোষ দিচ্ছে জেলা পরিষদ প্রকৌশলী সংশ্লিষদের।
সড়ক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত মাঝি মো. সোনাফ উদ্দিন বলেন, ইট সলিং নির্মাণের বালু দেয়া হয়নি। কেন দেয়া হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঠিকাদারে যেভাবে বলছে আমরা সেভাবে কাজ করছি।
স্থানীয় বাসিন্দা মেনরাও, তনসাং ম্রো বলেন, ইট সলিং নির্মাণ কাজে পুরনো ব্যবহৃত করা হয়েছে, আর ইটের নীচে বালু দেয়া হয়নি। রাস্তা মজবুত হতে হলে নীচে বালু হবে, না হলে কয়দিন পর নষ্ট হয়ে যাবে। এভাবে অনিয়মভাবে কাজ করে যাচ্ছে ঠিকাদার।
ওয়াই জংশনের দোকানদার আবছার বলেন, রাস্তা কাজে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এই রাস্তার কোনদিন টিকবে না। ঠিকাদার এর আগেও ড্রেইনে কাজ করার সময় দু নম্বরি কাজ করেছে একইভাবে রাস্তা কাজেও অনিয়ম করছে।
জংশন বাজারের সভাপতি রেরং ম্রো বলেন, যে ইটগুলো দিয়ে কাজ করা হয়েছে সেগুলো ভালো না। এর আগেও ড্রেইন ঢালা দেয়া সময় আড়াই ইঞ্চি ঢালায় দিয়েছে পরে সবার চাপে তিন ইঞ্চি ঢালাই দিয়েছে। এর দুই নাম্বার কাজ করে যাচ্ছে।
এব্যাপারে ঠিকাদার শিফু বড়ুয়া সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি একজন সাংবাদিক পরিবারের সদস্য। আর কাজের সময় ভুলে শ্রমিকরা বালু ব্যবহার করেনি। আর এবিষয়ে এলাকাবাসি অভিযোগ দিলে কি হবে তারা কি কাজ বুঝবে? ভাই, আপনি অফিস সাথে কথা বলেন !
রাস্তা নির্মাণের নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারে প্রশ্ন করা তিনি বলেন, অফিস থেকে নির্দেশনা আছে পুরানো ইট ব্যবহার করা যাবে। আর রাস্তার কাজে যেসব নতুন ইট আনা হয়েছে সবগুলো ভালো। আর এখানে রাস্তার কাজে কোন অনিয়ম হচ্ছে না বলে জোড় গলায় দাবী করেন তিনি।
জেলা পরিষদ প্রকৌশলী লেলিন চাকমা বলেন, রাস্তা কাজে পুরনো ময়লাযুক্ত স্যালভিশ ইট ব্যবহার করায় তুলে ফেলতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর রাস্তার কাজে অনিয়মের অভিযোগ আসায় প্রকৌশলীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
Comments