সাত বছর ধরে শিকলে বাঁধা মানসিক ভারসাম্যহীন মাসুদ

পৌষের কনকনে শীত আর গরমে ধুলোবালিমাখা শরীরে হাতে লোহার শিকল পড়ে এভাবেই কেটে গেছে দীর্ঘ ৭ বছর। মায়াভরা দু'টি চোখ দিয়ে ফ্যালফ্যাল করে এদিক-ওদিক তাকিয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে আপন মনে কথা বলে। কিন্তু তার সে কথাগুলো কেউ বোঝের চেষ্টা করে না!
বলছি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সলপ ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া গ্রামের ভারসাম্যহীন মাসুদ রানা (৩৫) এর কথা। একটি ভাঙ্গা টিনশেডের খোলা ঝুপড়ি ঘরে এভাবেই কাটছে তার জীবন।
মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে এ যুবককে একটি খুঁটির সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। একটি নরভরে চৌকিতেই খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, মলমূত্র ত্যাগ সবই করতে হয়। এভাবেই প্রায় সাত বছর ধরে শিকলে বন্দিজীবন কাটছে তার। মাসুদের পিতা মৃত শফিকুল ইসলাম। মাও বেঁচে নেই। আছে দুই বোন আর দুই ভাই।
মাসুদের বড় ভাই সোহেল রানা বলেন, দীর্ষ ১৫ বছর আগে মাসুদ অসুস্থ হয়ে পরে। অসুস্থ হওয়ার পর তাকে বিভিন্ন ডাক্তার দেখানো হয়। দিন যত যাচ্ছিলো মাসুদ ততই অসুস্থ হয়ে পরে। এক পর্যায়ে সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার পর থেকেই পাগলামি করা শুরু করে এবং যাকে দেখে তাইকে মারতে যায়। মাসুদকে অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। তবে তাকে আর সুস্থ করা যায়নি।
এখন মাঝে মধ্যে সুস্থ মানুষের মত কথা বলে বলেও জানান তিনি। তার চিকিৎসা করাতে ইতিমধ্যে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। তাই একটা ভাতা কার্ড পাওয়ার আবেদন জানান তিনি।
মানসিক ভারসাম্যহীন মাসুদ রানার অনেক কিছুই স্মরণে রয়েছে তার সাথে কথা বলে জানা যায়। তিনি ২০০৪ সালে সোনাতলা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এর এইচএসসিতে উল্লাপাড়া আরএস ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। এরপর থেকে তার অসুস্থতা দেখা দেয়। তারপর থেকে আর পড়াশোনা করতে পারেননি। ২০০৮ সাল থেকে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এবং ৭ বছর ধরে শিকলে বন্ধী। বর্তমানে তিনি তার অতীতের অনেক কিছু বলতে পাড়েন।
এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন,প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা অনলাইনে আবেদনের সুযোগ পেয়েছি। এবং মানসিক ভারসাম্যহীন মাসুদদের তথ্য আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। খুব দ্রুতই মাসুদকে ভাতা কার্ড দেওয়া হবে।
Comments