দ্রুত নির্বাচন দেয়ার জন্য এতো প্রাণহানি হয়নিঃ বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচনসংক্রান্ত সব আইনকানুন, বিধিবিধান, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। নির্বাচনী ব্যবস্থাকে একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ প্রশস্ত করতেই এটি করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার। তিনি মনে করেন, তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দেয়ার জন্য এতো প্রাণহানি হয়নি। বদিউল আলমের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা জার্নালের শাহীদ সম্পদ।
ঢাকা জার্নাল: একটা গণঅভ্যূত্থানের পর যেই সময়টাকে আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি। এই সময়ে করণীয় কী হতে পারে?
বদিউল আলম মজুমদার: আমাদেরকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। যে গণঅভ্যূত্থান হয়েছে, এটা কেনো হয়েছে। অতীতে যেসব বঞ্চনার আমরা শিকার হয়েছি, যেরকম অধীকারহীনতায় আমরা ভুগেছি সেগুলোর অবসান হওয়া দরকার। আমরা ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম, দেশে আইনের শাসন ছিলো না, বিভিন্নভাবে নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সেগুলোর অবসান হওয়া দরকার।
আর এইগুলোতো আপনাআপনি অবসান হবে না, এজন্য কতগুলো পরিবর্তন দরকার। ছাত্র জনতার যে আন্দোলন যার উদ্দেশ্য ছিলো মোটাদাগে দুটো: এক স্বৈরাচারের পতন এবং স্বৈরাচার আবার যেন ফিরে না আসে কোনদিন। অপরটি হলো যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে, লুটপাট করেছে, বিভিন্নভাবে বিভিন্ন ধরনের অপরাধী কাজ করেছে তাদের বিচারের আওতায় আনা।
জা: আমরা সে পথে এগুতে পারছি কি? নির্বাচন নিয়েও নানা মত দেখা যাচ্ছে?
বদিউল: হ্যা, কিছু কিছু ব্যক্তি, কিছু গোষ্টি নির্বাচনের জন্য অস্থির। তারা ধৈর্যহীন হয়ে পড়েছে, তারা চান নির্বাচন কিন্তু এই ছাত্র জনতা তো নির্বাচনের জন্য প্রাণ দেননি। তাঁরা প্রাণ দিয়েছেন স্বৈরাচারের পতন এবং স্বৈরাচার চিরতরে অবসানের জন্যে। অন্যায় অবিচারের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন।
হয়তো সব কাজ শেষ করা সম্ভবও হবে না, শুরু করতে হবেতো। এরই মধ্যে কিছু কিছু শুরু হয়ে গেছে আর সুষ্ঠু একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে কতগুলো পরিবর্তন এনে যাতে আমাদের ভোটাধিকারই শুধু নিশ্চিত না হয় এর মাধ্যমে আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটাও যেন কার্যকর হয়, সেটার উপর লক্ষ্য রাখতে হবে। আর সেই কাজটিই করতে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে, বর্তমান সরকারকে সময় দিতে হবে; মোটকথা সবাই মিলে সরকারকে সহায়তা করতে হবে। এ সরকার ব্যর্থ হলে এটা আমাদের সকলের ব্যর্থতা। যার পরিণতিও অমঙ্গলকর হবে'।
জা: প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে?
বদিউল: এই সরকারকে যেন সব দাবি পূরণের জন্য পাঠানো হয়েছে (হাসি)। আসলে কি তাই? সব দাবিই তো সরকার পূরণ করতে পারবে না। সবারই সহযোগিতা লাগবে আর সরকারকেও আরো সচল হতে হবে। সরকারের যেসব ভুলভ্রান্তি আছে সেগুলো চিহিৃত করে সেদিকে নজর দিতে হবে। তাদেরকে আরো গতিশীল হতে হবে। আর আমাদের উচিত এ সরকারকে সহায়তা করা।
জা: এই মুহূর্তে সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জগুলো কী কী বলে আপনি মনে করেন?
বদিউল: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জই তো এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি। যেটা অনেক মানুষের জন্যই নাভিশ্বাস হচ্ছে। বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য। আরেকটা বিষয় হলো দ্রুত আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হওয়া দরকার। বিভিন্ন গোষ্টি প্রতিদিন রাস্তা বন্ধ করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে এইগুলোর অবসান হওয়া দরকার। একইসাথে ঢালাও যে মামলাগুলো হয়েছে এগুলো হওয়া উচিত ছিলো না এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার। যারা এসব করেছে তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনা দরকার। সত্যিকার দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা আর শাস্তি হওয়া উচিত। এভাবে ঢালাও মামলায় সত্যিকারের দোষীরা পার পেয়ে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সরকারকে আরো বেশি নজর দিতে হবে।
জা: বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে কারা? সাধারণ জনতা তো জানেনই না আসলে কী ঘটেছে।
বদিউল: এদেরকে কেউ কেউ হয়তো উষ্কানি দিয়ে নামাচ্ছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবেই হচ্ছে। এগুলো অবসানের জন্য সরকারের তৎপরতা আর জনগনের সচেতনা প্রয়োজন। এগুলো জনস্বার্থ পরিপন্থি।
জা: বেশিরভাগ সেক্টরই তো এখন অস্থিরতায় ভুগছে?
বদিউল: এগুলো অবসান ঘটানো সহজ না তবে আমাদের আরো সচেষ্ট হতে হবে। শিল্পখাতেও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এগুলো ঘটানো হচ্ছে। এর অবসান হওয়া জরুরি। একটা রাষ্ট্র ততোভালো চলবে যত তাড়াতাড়ি আমরা নাগরিকরা সক্রিয় হবো, নাগরিকরা ভূমিকা রাখবেন। এখন আমাদের আরো সচেতন হতে হবে।
জা: বিষয়গুলো নিয়ে কীভাবে কাজ করছেন?
বদিউল : আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। আমার ওপরেও একটা দ্বায়িত্ব পড়েছে, নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে কাজ করছি আমরা। সবার সাথে মিলে একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব আমরা তৈরি করছি যেগুলো বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আশাকরি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথটা আরো সুগম হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাটার পথটা আরো প্রশস্ত হবে।
ঢাকা জার্নাল: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
বদিউল আলম মজুমদার: ঢাকা জার্নালকেও ধন্যবাদ।