চট্টগ্রামে শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত শিল্পীরা, জেলায় ১৯০৬ মণ্ডপে দুর্গাপূজা
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি চট্টগ্রামে পুরোদমে চলছে। নগর এবং জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমা তৈরি, প্যান্ডেল নির্মাণ এবং সাজসজ্জার কাজে শিল্পী ও কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) শুভ মহালয়া। মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবী পক্ষের শুরু হয়। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আয়োজন শারদীয় দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হবে মূল উৎসব।
হিন্দুদের আচার অনুযায়ী মহালয়া, বোধন আর সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। মহালয়ায় মণ্ডপে-মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন, ঢাক-কাঁসা ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে আহ্বানের মধ্য দিয়ে সূচনা হবে দুর্গোৎসবের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনো কোনো প্রতিমার ওপর শিল্পীর তুলির শেষ আঁচড় পড়ছে। আর কোনো কোনো পূজা উদযাপন কমিটি তাদের অর্ডার করা প্রতিমা মণ্ডপে বসানোর জন্য নিয়ে গেছেন। পুরোদমে চলছে দুর্গোৎসব উদযাপনের প্রস্তুতি। টেরিবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার এবং শপিংমলগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে।
চট্টগ্রাম জেলায় এবার সর্বজনীন দুর্গাপূজামণ্ডপের সংখ্যা ১৯টি বেড়ে ১ হাজার ৬১৪টি হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরে একটি কমে ২৯২টি সর্বজনীন পূজার আয়োজন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পূজা উদযাপনের সার্বিক নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অধিকাংশ মণ্ডপে লাগানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
প্রতিমাশিল্পী তপন পাল বলেন, 'গত প্রায় চার মাস আগে থেকে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের তুলির আঁচড়। একেকটি প্রতিমা ২৫ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করি। কোনো কোনো পূজা কমিটি এরই মধ্যে তাদের প্রতিমা ডেলিভারি নিতে শুরু করেছে।' তপন পাল জানান, তারা এবার পূজার জন্য প্রায় ২শ প্রতিমা তৈরি করেছেন। কারণ তারা শুধু চট্টগ্রাম নয়, আশপাশের জেলার প্রতিমার চাহিদাও মিটিয়ে থাকেন।
নগরীর সদরঘাটে গিয়ে জানা গেল, প্রতিমাশিল্পীরা রাতভর কাজ করেন। দিনের বেলায় ঘুমান। রাতের বেলায় কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তপন পাল জানান, রাতে নির্বিঘ্নে কাজ করা যায়। তাই শিল্পীরা রাতে কাজ করতে পছন্দ করেন।
চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রিয় মজুমদার দোলন বলেন, 'এবার জেলায় সর্বজনীন মণ্ডপের সংখ্যা ১৯টি বেড়ে ১ হাজার ৬১৪টি হয়েছে। আমরা তিন মাস আগে থেকেই পূজার প্রস্তুতি নিয়েছি। পূজার ছুটি দুই দিন হওয়াতে উৎসবের মাত্রা বাড়বে।' এবারের পূজায় কোনো ধরনের বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা তাদের মাঝে নেই বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ জানান, এবার তাদের সর্বজনীন পূজামণ্ডপের সংখ্যা ২৯২টি। প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তারা সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব উদযাপনের আশা ব্যক্ত করে কিছুটা শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'জাতীয় সংসদ নির্বাচন অতিসন্নিকটে। নির্বাচনের আগে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে কেউ পূজামণ্ডপে বিশৃঙ্খলা করতে পারে- এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাই এবার আমি খুবই সতর্ক।' প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বেশ তৎপর বলে উল্লেখ করেন তিনি।
শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব দে পার্থ বলেন, 'এবার শারদীয় দুর্গাপূজাকে উৎসবমুখর ও নিরাপদ করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পূজামণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক এবং শৃঙ্খলার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিএনপির নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তারাও আমাদের সঙ্গে নিরাপত্তা দিতে মণ্ডপ টিম গঠন করেছে। সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। আশা করি শান্তিপূর্ণভাবে আমরা দুর্গাপূজা সম্পন্ন করতে পারব।'
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপত্তা বিবেচনায় এবার পূজামণ্ডপকে তিনভাগে ভাগ করে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে ১ হাজার ৪৪০টি পূজামণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। বাকিগুলোতেও কঠোর নজরদারি রাখা হবে। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় ১৭ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ০১৩২০১০৮৩৯৮ নম্বরে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়।
Comments