কর্মক্ষেত্রে তুই-তুমি সম্বোধন করা যাবে না

মর্যাদাপূর্ণ শ্রমপরিবেশের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শ্রেণি, লিঙ্গ, বর্ণ ও জাতিভেদে অবমাননাকর ও অমর্যাদাকর ক্ষমতাকেন্দ্রিক ভাষা ব্যবহার রোধের পরামর্শ দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
কমিশন বলেছে, কর্মপরিবেশে শ্রেণিক্ষমতায় তুই-তুমি সম্বোধনচর্চা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া শ্রম আইনে 'মহিলা' শব্দের পরিবর্তে 'নারী' শব্দ ব্যবহারের সুপারিশ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে শ্রম সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ, অন্যান্য লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীভেদে মজুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াসহ শ্রম খাতের সর্বত্র বৈষম্য নয়, বরং সম–অধিকার নিশ্চিতে কার্যক্রম গ্রহণ করবে রাষ্ট্র। একই সঙ্গে পাহাড়ে ও সমতলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও বহুজাতির জনগোষ্ঠীর শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।
কমিশনের প্রতিবেদনে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়েও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, যৌন হয়রানিসহ সব ধরনের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা নেবে। ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী সব কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতাবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে অভিযোগ সেল ও নিষ্পত্তি কমিটি গঠন করা জরুরি।
নারীদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষার বিষয়ে বলা হয়েছে, সব নারী শ্রমিকের মাতৃত্বকালীন ছুটি সবেতন ছয় মাস নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেবে রাষ্ট্র। প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারের সহায়তা প্রদান ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য বিশেষ স্কিম প্রণয়ন করা হবে।
শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। এতে বলা হয়, শিশু-কিশোর ও জবরদস্তিমূলক শ্রম বন্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আগাম দাদন দেওয়াসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে জবরদস্তিমূলক শ্রমের সব পথ বন্ধ করায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সব শ্রমিকের সর্বজনীন সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার প্রাপ্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, মৃত্যু, কর্ম–অক্ষমতা, অসুস্থতা-অবসর, মাতৃত্বকালীন সুবিধা বা যেকোনো প্রতিকূল অবস্থায় শ্রমিকেরা নিরাপত্তার অধিকার পাবেন। শ্রমিকদের সমস্যার ভিত্তিতে কোনো না কোনো নিরাপত্তা স্কিমে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং সে ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) জীবনচক্রভিত্তিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রবর্তন ও সামাজিক বিমাব্যবস্থা প্রবর্তনে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
এ ছাড়া শ্রম আদালতের শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ পর্যন্ত সর্বত্র বাংলা ভাষার প্রচলন করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন।
Comments