রাখাইনে দফায় দফায় বিস্ফোরণ, নির্ঘুম রাত উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ভেসে আসা বিমান হামলা ও ভারী গোলাবর্ষণের বিকট শব্দে আতঙ্কে রাত কেটেছে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের। শনিবার দিবাগত গভীর রাতে বিস্ফোরণের শব্দ আসতে শুরু করে। আজ (২৮ ডিসেম্বর) রবিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত কিছুক্ষণ পরপর প্রচণ্ড শব্দ শোনা যায়। বিকট আওয়াজে সীমান্তের বসতঘরের দরজা-জানালা কেঁপে ওঠে। এমন শব্দ নিকট অতীতে শোনা যায়নি বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা।
সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি ও জান্তা বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের অংশ হিসেবেই এসব বিস্ফোরণ ঘটে। সীমান্ত পিলার বিআরএম-১৮ থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে এবং শূন্য লাইন থেকে আনুমানিক ১৩ কিলোমিটার ভেতরে বলিবাজার এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উখিয়ার পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়ন এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু বলেন, "রাতে হঠাৎ বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ হয়। সীমান্ত এলাকার মানুষজন আমাকে বারবার ফোন করে জানতে চেয়েছেন কী হচ্ছে।সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছি। এলাকায় কেউ ঘুমাতে পারেনি।"
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, রাখাইনে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। শনিবার রাতে গোলাবর্ষণের শব্দে অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। হোয়াইক্যংয়ের বাসিন্দা আজমত উল্লাহ বলেন, "রাতে যুদ্ধবিমান ও বিস্ফোরণের শব্দে আমাদের বাড়ি কেঁপে ওঠে।
ভয়ে আমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাইরে বের হয়ে যাই। এমন ভয়ংকর শব্দ আগে কখনো শুনিনি।" স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে অন্তত চার থেকে পাঁচবার মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়েছে, যা সীমান্তবাসীর উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে। এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) উখিয়া ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন বলেন, "হোয়াইক্যং বিওপি এলাকার নিকটবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ঘটনাগুলো বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ভেতরে নয়।"
রাখাইনের মংডু শহরের আশপাশসহ একাধিক স্থানে জান্তা বাহিনী হেলিকপ্টার থেকে হামলা চালিয়েছে। এর আগে টানা ১১ মাসের সংঘর্ষের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি মংডু টাউনশিপের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন কিছু সময় সীমান্ত এলাকায় স্বস্তি ফিরলেও সাম্প্রতিক ঘটনায় সেই স্বস্তি আবার ভেঙে গেছে। সীমান্তবাসীরা এখন পরিস্থিতি আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
Comments