সুনামগঞ্জে টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় পাল্টে গেছে গ্রামীণ সড়কপথের চিত্র
গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ে অধীনে সুনামগঞ্জে গ্রামীণ অবকাঠামো ও সড়ক পথের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও এর সুফল নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।
হাওরাঞ্চলের ভূ-প্রকৃতিগত অবস্থা, বৈরি আবহাওয়া, যথাযথ পরিকল্পনার অভাব ও সংশ্লিষ্টদের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে বড় অঙ্কের বরাদ্দে বাস্তবায়িত প্রকল্প প্রকৃত অর্থে কাজে আসেনি। ফলে গ্রামীণ অবকাঠামো ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন স্থায়ী হয়নি বলে মনে করেন জেলার সচেতনমহল। তবে এক্ষেত্রে ভিন্ন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা। এ উপজেলায় টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ সড়কপথের চিত্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে উপজেলার গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এক সময় গ্রামীণ সড়কপথের টেকসই উন্নয়নের জন্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সরকারের অন্যান্য দপ্তরের উপর নির্ভরশীল থাকলেও বর্তমানে তার বাস্তবায়ন হচ্ছে তুলনামূলক কম বরাদ্দের কাবিখা-কাবিটা প্রকল্পে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় এমন পরিবর্তন ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে গ্রামীণ জনপদে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা-কাবিটা) কর্মসূচির আওতায় (২০২৫-২০২৬) অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ে ১৩৫ প্রকল্প ২ কোটি ৬৭ লাখ ৮৪ হাজার ১৮৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বিগত সময়ে উপজেলায় গৃহীত প্রকল্পগুলোতে রাস্তাঘাট উন্নয়নের মাটি ভরাট প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এই প্রথমবারের মতো উপজেলায় ১৩৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১০০টি প্রকল্পে সিসি ও আরসিসি পাকাকরণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। এমন টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনায় গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।
সরেজমিনে উপজেলার লক্ষণশ্রী ও গৌরারং ইউনিয়নের একাধিক প্রকল্প পরিদর্শন করলে বাস্তবায়িত প্রকল্পের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়। গৌরারং ইউনিয়নের জমিদার বাড়ির পাশ দিয়ে গ্রামের ভেতরে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দে রাস্তায় মাটি ভরাট ও পাকাকরণের কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। সড়াটির এমন উন্নয়নে খুশি এলাকার তিনটি গ্রামের মানুষ। গীতা রাণী নামের এক গৃহবধূ জানান, বর্ষা বা বৃষ্টির দিনে গ্রামের রাস্তাটিতে কাদা থাকতো। চলাচলে গ্রামের মানুষগুলো চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। সড়ক পাকা হওয়ায় বারোমাস চলাচল করতে সুবিধা হবে।
লক্ষণশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজ তালুকদার জানান, এতোদিন টিআর কাবিটা প্রকল্প দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ হতো। বর্ষায় মাটির কাজ নষ্ট হয়ে যায়। কয়েক বছর পর আবারও মাটি ভরাট করতে হয়। কিন্তু এই প্রথমবার ইউনিয়নে অনেকগুলো রাস্তা পাকা করা হয়েছে। এতে উন্নয়ন স্থায়ী হবে বলে জানান তিনি। এ জনপ্রতিনিধি আরও বলেন, আমরা এতোদিন জানতাম টিআর-কাবিটা মানে মাটির কাজ। এই প্রথম বার পাকাকরণের কাজ হওয়ায় এলাকার মানুষ খুশি। তাছাড়া বরাদ্দের যথার্থ ব্যবহার হচ্ছে। এখানে অনিয়ম করার সুযোগ নেই। একারনে প্রকল্প কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আবু হাসনাত সরকার বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার প্রকল্পে এই প্রথম সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৩৫টি প্রকল্পের মধ্যে ১০০টি প্রকল্পে টেকসই পাকাকরণ প্রকল্প হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার। এর মাধ্যমে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক সৃষ্টি হবে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা জেরিন বলেন, সুনামগঞ্জ একটি হাওরবেষ্টিত দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। এখানে মাটির কাজ বেশিদিন দৃশ্যমান থাকে না। আমরা এবার মাটির কাজের পাশাপাশি শতাধিক সিসি, আরসিসি রাস্তা ও গাইড ওয়ালের কাজ করছি। এটি দৃশ্যমান কাজ। যা মানুষ উপকারে আসবে। প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে মনিটরিং করা হয়েছে।
Comments