পুতিনের লক্ষ্য পুরো ইউক্রেন, চাঞ্চল্যকর তথ্য মার্কিন গোয়েন্দাদের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পুরো ভূখণ্ড দখলের লক্ষ্য থেকে এখনও সরে আসেননি। একই সঙ্গে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ থাকা ইউরোপের কিছু এলাকা পুনরুদ্ধারের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও তার অপরিবর্তিত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ মূল্যায়নে উঠে এসেছে এ তথ্য। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্র যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ইউক্রেন শান্তি আলোচকদের অবস্থানের সঙ্গে স্পষ্ট বিরোধ সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, পুতিন যুদ্ধ থামাতে চান। যদিও গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা। সূত্র জানায়, সর্বশেষ গোয়েন্দা মূল্যায়নটি করা হয়েছে গত সেপ্টেম্বর মাসে।
রিপোর্টে বলা হয়, পুতিন ইউরোপের জন্য হুমকি নন—রুশ নেতার এমন দাবি বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য একই মত ধরে রেখেছে। ইউরোপীয় দেশগুলো ও তাদের গোয়েন্দা সংস্থার মূল্যায়নও একইধরনের।
অর্থাৎ তাদের মতে, পুতিন ইউক্রেন ছাড়াও সাবেক সোভিয়েত ব্লকের অঞ্চলগুলো, এমনকি ন্যাটো জোটভুক্ত দেশসমূহ দখলের ইচ্ছা পোষণ করেন। মার্কিন হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির সদস্য মাইক কুইগলি বলেন, 'গোয়েন্দা তথ্য সবসময়ই জানিয়েছে—পুতিন আরও বেশি চান। ইউরোপীয় নেতারাও এতে নিশ্চিত।'
বর্তমানে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। এর মধ্যে রয়েছে লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক প্রদেশের বেশিরভাগ অংশ, পূর্বাঞ্চলের শিল্পসমৃদ্ধ দনবাস অঞ্চল, জাপোরিঝিয়া, খেরসন এবং কৌশলগত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ। এই সব অঞ্চলসহ চারটি প্রদেশকে রাশিয়ার অংশ বলে দাবি করেন পুতিন। অন্যদিকে ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউক্রেনের দোনেৎস্কের যে ছোট অংশ এখনো কিয়েভের দখলে রয়েছে, তা থেকে সেনা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে, যা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং অধিকাংশ ইউক্রেনীয় প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, সংঘাত শেষ করতে ট্রাম্প প্রশাসন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং শান্তি চুক্তি আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নিকটে রয়েছে। তবে এই মন্তব্যে গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়া হয়।
শনিবার মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা প্রধান তুলসি গ্যাবার্ড এক্স-এ জানান, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আইনপ্রণেতাদের ব্রিফিংয়ে বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে বড় ধরনের যুদ্ধ চায় না। পাশাপাশি ইউক্রেনে রুশ সেনাদের পারফরম্যান্স দেখে ধারনা করা হচ্ছে, তারা বর্তমানে ইউক্রেন বা ইউরোপ দখলের সক্ষমতা রাখে না।
ট্রাম্পের শান্তি আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন তার জামাতা জারেড কুশনার এবং রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্টিভ উইটকফ। তারা ইউক্রেন, রাশিয়া এবং ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহ ধরে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, শুক্রবার মায়ামিতে কুশনার এবং উইটকফ ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং সপ্তাহান্তে তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে।
এদিকে বার্লিনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত একটি পরিকল্পনায় ব্যাপক অগ্রগতি দেখিয়েছেন। আলোচনার সঙ্গে যুক্ত সূত্র জানায়, এই প্রস্তাবের সঙ্গে ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল রাশিয়াকে ছাড় দিতে হবে—এমন মত থাকলেও কয়েকজন ইউরোপীয় কূটনীতিক বলেছেন, এখনো খোলা রয়েছে বিকল্প পথ।
নিরাপত্তা পরিকল্পনায় ইউক্রেন ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে মূলত ইউরোপীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে, যাতে রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিহত করা যায়। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সংখ্যা ৮ লাখে সীমিত রাখার প্রস্তাব থাকলেও রাশিয়া আরও কম সেনাসংখ্যা চায় এবং সেটিও বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। পরিকল্পনায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সহায়তা এবং ইউক্রেনের আকাশে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত টহল ব্যবস্থা।
Comments