কাশির জন্য ওষুধ না লেবু-মধু কোনটি উপকারী?
শীতের এই সময়ে ভাইরাস জ্বর ঘরে ঘরে। অফিস, বাসা কিংবা গণপরিবহণ—সবখানেই এখন খুকখুক কাশির শব্দ। কাশি হলেই আমরা সাধারণত ওষুধের দোকানে ছুটি। কাশির সিরাপ খুঁজি। কিন্তু এই সিরাপ কি আসলেই কাজ করে? নাকি ঘরে তৈরি লেবু-মধুর মিশ্রণই এর চেয়ে ভালো?
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জ্যাকি স্মিথ রেডিও ফোর-এর 'স্লাইসড ব্রেড' অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন আসল সত্যটা।
বেশিরভাগ কাশিই হয় সাধারণ সর্দি বা কোল্ড ভাইরাস থেকে। এই ভাইরাসগুলো সাধারণত আপনা-আপনিই শরীর থেকে বিদায় নেয়। কাশির সিরাপ কিন্তু এই ভাইরাস মারতে পারে না। এটি শুধু গলাকে একটু আরাম দেয় এবং কাশি হওয়ার ভাবটা কমায়।
যদি খুশখুসে বা শুকনো কাশি হয়, তবে গ্লিসারলযুক্ত সিরাপ গলাকে ভিজিয়ে রাখে। এটি গলার ভেতরের শুষ্ক ভাব কমায়। অধ্যাপক স্মিথ বলেন, এর জন্য বেশি দাম দিয়ে নামি ব্রান্ডের ওষুধ কেনার কোনো মানে হয় না। কম দামি সাধারণ ব্র্যান্ডের ওষুধও ঠিক একই কাজ করে।
তবে লেবেলে চিনির পরিমাণটা দেখে নেওয়া জরুরি। মিষ্টি সিরাপে প্রচুর চিনি থাকে। তাই চিন্তার কারণ থাকলে সুগার-ফ্রি বা চিনিমুক্ত ওষুধ বেছে নেওয়াই ভালো।
কাশির ওষুধে অনেক সময় 'অ্যাক্টিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট' বা বিশেষ উপাদানের কথা বলা থাকে। যেমন ডেক্সট্রোমেথরফানের কথা লেখা থাকে। দাবি করা হয়, এটি কাশি থামিয়ে রাখে। কিন্তু অধ্যাপক স্মিথ বলছেন, এর প্রভাব আসলে খুবই কম।
ওষুধের মাত্রা বা ডোজের দিকে খেয়াল রাখা খুব জরুরি। বিশেষ করে ডেক্সট্রোমেথরফানের ক্ষেত্রে, কারণ এর প্রতি আসক্তি তৈরির ভয় থাকে। তাই বোতলের গায়ে লেখা নির্দেশনার বেশি খাওয়া একদমই উচিত নয়। আবার কিছু সিরাপে লেভোমেনথল থাকে। এটি গলার ভেতর ঠান্ডা অনুভূতি দেয়। এতে গলার জ্বালাপোড়া ভাবটা কমে এবং কাশির বেগ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যাদের বুকে কফ জমে থাকে, তাদের কষ্টটা অন্যরকম। মনে হয় যেন বুকের ভেতর কফের সাগর জমে আছে। ব্রঙ্কাইটিস বা সাইনাসের কারণে এমনটা হতে পারে।
এই অবস্থায় অনেকেই ফার্মেসি থেকে সিরাপ কিনে খান। কিন্তু অধ্যাপক স্মিথ এসব ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায় গুয়াইফেনেসিন নামের উপাদানের কথা। দাবি করা হয় এটি কফ পাতলা করে। কিন্তু এর পক্ষে জোরালো কোনো প্রমাণ নেই। আবার অ্যান্টিহিস্টামিনের মতো ওষুধ আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু এটি কাশি সারায় না। এমনকি থাইম বা স্কুইলের মতো ভেষজ উপাদানের কার্যকারিতা নিয়েও তেমন কোনো প্রমাণ নেই।
এর বদলে অধ্যাপক স্মিথ পরামর্শ দেন 'অপেক্ষা করার'। প্রচুর পানি পান, লজেন্স চুষে খাওয়া যেতে পারে। এটি লালা তৈরি করে এবং কিছু সময়ের জন্য কাশি থামিয়ে রাখে।
লেবু আর মধু কি কাজ করে?
শুকনো কাশির জন্য গরম পানিতে লেবু আর মধুর মিশ্রণ দারুণ কাজ করে। দোকানের সিরাপের চেয়ে এটি কোনো অংশে কম নয়।
একটি রিভিউতে দেখা গেছে, এক বছরের বেশি বয়সী শিশুদের সর্দি-কাশিতে মধু ও লেবু বেশ উপকারী। কাশি হওয়া কিন্তু শরীরের জন্য দরকারি। এর মাধ্যমেই শরীরের ভেতর থেকে কফ বা মিউকাস বের করে দেয়।
বুকে কফ থাকলে কাশি দিয়ে তা বের করে দেওয়াই ভালো। এতে শ্বাসনালী পরিষ্কার হয়। অধ্যাপক স্মিথ বলেন, "আমার যা বের করা দরকার, আমি কাশি দিয়ে তা বের করব। আমি কাশি থামানোর চেষ্টা করব না।" তবে কফ ফেলার সময় অবশ্যই টিস্যু ব্যবহার করতে হবে।
যদি ভুল করে কফ গিলে ফেলেন, তাতেও ভয়ের কিছু নেই। পাকস্থলী বা পেট সেটা হজম করে ফেলতে পারে। তবে কফের রঙ যদি গাঢ় বাদামি হয়, তবে চিন্তার বিষয়। কারণ এতে রক্ত থাকতে পারে।
সাধারণত বুকের কফ বা কাশি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার হয় না। কিন্তু যদি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকে, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
বিবিসি
Comments