বেহালদশায় ময়মনসিংহের অধিকাংশ স্মৃতিসৌধ ও বধ্যভূমি
বছরে দুইদিন ছাড়া বাকি সময় অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে ময়মনসিংহ স্মৃতি সৌধ, বধ্যভূমি এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে তৈরী করা স্থাপনা গুলো। রাত নামলেই এসব জায়গায় বাড়ে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অসামাজিক কার্যকলাপ। চুরি হয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ। দীর্ঘদিনেও এসব স্থাপনার সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যােগ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধরা।
ময়মনসিংহ শহরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ১৯৯৯ সালে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় স্মৃতি সৌধ। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে স্মৃতি সৌধের বেদিতে পশু পাখির বিষ্ঠার স্তুপ, মল-মুত্র ত্যাগের ফলে বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। চুরি হয়ে গেছে সীমানা প্রাচীরের রড। রাতে আলো ও নিরাপত্তা কর্মী না থাকায় বাড়ছে অপরাধ প্রবনতা। অবাধে প্রবেশ করছে গরু ছাগল। সীমানা প্রাচীর রড খুলে বিক্রি করে মাদকসেবীরা জোগার করছে মাদকের টাকা। এতকিছুর পরও নজর নেই প্রশাসনের।
স্থানীয় যুবক মিজান জানান, দিনের বেলায় স্মৃতিসৌধের আশেপাশে বসে মাদকের আড্ডা। রাতে ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের মিলনস্থলে পরিনত হয়েছে এই স্মৃতি সৌধ। সরকার মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও কোন কার্যক্রম নেই প্রশাসনের।
স্মৃতিসৌধে ঘুরতে আসা জুয়েল সরকার বলেন, নোংরা পরিবেশ এখন স্মৃতি সৌধ। চারদিকে মল-মুত্রের গন্ধ। পশুপাখির বিষ্ঠার গন্ধ। মানুষ একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে আসার বদলে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা এখানে।
শুধু স্মৃতি সৌধ নয়, জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে জেলার অধিকাংশ বধ্যভূমি গুলো। পোস্টার ও নামফলক মুছে যাওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে এগুলো বধ্যভূমি। থানা ঘাটের পিছনে বধ্যভূমি একেবারে রয়েছে অরক্ষিত। নষ্ট হচ্ছে পবিত্রতা। সার্কিট হাউজ ব্যাট বল চত্বরে এখানে বধ্যভূমির উপর বসেছে চটপটি ফুসকার দোকান। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত বধ্যভূমির নেই নামফলক। আগে রাস্তার পাশে বধ্যভূমি চিহৃিত নামফলক থাকলেও তা এখন নেই। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি সেন্টারের আধুনিক নামফলক থাকলেও স্থান পায়নি বধ্যভূমির নাম।
জীবিত অবস্থায় স্মৃতি সৌধ ও বধ্যভূমি গুলোর করুন অবস্থা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমল পাল। তিনি বলেন, একাত্তর এদেশের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু আজ এই মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনা অবহেলিত। জুলাই বিপ্লবের পর অনেক স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এগুলো সরকার পুনরায় ঠিক করলে আবার যে ভেঙ্গে ফেলা হবে না তার নিশ্চয়তা কি? মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের আত্মত্যাগের কথা নতুন প্রজন্মকে জানাতে স্মৃতি সৌধ ও বধ্যভূমি গুলো সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
শাহ মো: কামরুল হুদা জানান, বছর জুড়ে স্মৃতিসৌধে বিভিন্ন সংস্কার কাজ চলে। আসন্ন বিজয় দিবস উপলক্ষে সংস্কার ও সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে। আর ব্যাপক হারে সংস্কার কাজ করার জন্য ময়মনসিংহের বিভিন্ন দপ্তরের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ময়মনসিংহে ৯টি স্মৃতি সৌধ, ৫৯টি বধ্যভূমি এবং দুইশটির বেশি রয়েছে একাত্তরে শহীদদের কবর।
Comments