পাঁচ শহীদের আত্মত্যাগে আজ সাঘাটা-ফুলছড়ি মুক্ত দিবস
আজ ৪ ডিসেম্বর। ফুলছড়ি-সাঘাটা হানাদার মুক্ত দিবস। এই দিনে গাইবান্ধা জেলার প্রথম হানাদারমুক্ত উপজেলা ফুলছড়ি ও সাঘাটা। ১৯৭১ সালে এই দিনে এ দুই উপজেলাকে মুক্ত করতে পাঁচ বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মত্যাগে ও দুই জন বেসামরিক ব্যক্তি বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে শাহাদত বরণ করেন। এ যুদ্ধে ২২ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তৎকালীন ফুলছড়ি সিও অফিসের চার কিলোমিটার দূরে তিস্তামুখ রেলওয়ে ফেরিঘাট এলাকায় ঘাঁটি স্থাপন করে। ক্যাম্প থেকে হানাদার বাহিনী আশেপাশের এলাকার মানুষের ওপর হামলা, লুটপাট ও নির্যাতন চালায়। পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলে জুন মাসের প্রথম দিকে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে এলাকার ছাত্র-যুবকেরা।
১১নং সেক্টরের সহকারী কোম্পানি কমান্ডার গৌতম চন্দ্র মোদকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৪ ডিসেম্বর ভোররাতে প্রথমে ফুলছড়ি থানায় উপর্যুপরি ১০টি গ্রেনেড হামলা চালায়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকসেনারা ক্যাম্প ছেড়ে গোবিন্দী ওয়াপদা বাঁধের আড়ালে অবস্থান নেয়। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ঊর্ধ্বশ্বাসে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়ার দিকে দৌঁড়ে পালাতে থাকে। গ্রামবাসীও পাকসেনাদের ধাওয়া করে।
এ সময় মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া পাকসেনাদের একটি দল ওয়াপদা বাঁধের ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘণ্টাব্যাপী এ সম্মুখযুদ্ধে ২২ পাকসেনা নিহত এবং শহীদ হন ৫ বীর মুক্তিযোদ্ধা। এরই মধ্যে দিয়ে শত্রুমুক্ত হয় ফুলছড়ি ও সাঘাটা অঞ্চল।
শাহাদতবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন আফজাল হোসেন, কবেজ আলী, যাহেদুর রহমান বাদল, ওসমান গণী ও আবদুল সোবহান।
পরের দিন ৫ ডিসেম্বর সকালে পাঁচ বীরের মরদেহ গরুর গাড়িতে করে সাঘাটা থানার সগুনা ইউনিয়নের খামার ধনারুহা স্কুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে নিয়ে এসে সমাহিত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে পাঁচ বীর শহীদের সম্মানে সগুনা ইউনিয়নের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিনগর ইউনিয়ন রাখা হয়। এছাড়া, শহীদদের সম্মানে তাদের কবরের পাশে নির্মিত হয়েছে স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স।
Comments