বর্ষায় নৌকা, শুকনো মৌসুমে ঘোড়ার গাড়ি চরাঞ্চলের একমাত্র ভরসা
উত্তরে নদী আর প্রকৃতির মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা জেলা গাইবান্ধা। বর্ষার পানিতে ডুবে যায় চর আর গ্রীষ্মে চরে পড়ে বালির স্তর। বর্ষাকালে নৌকা আর শুকনো মৌসুমে চরাঞ্চলে প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। চরে উৎপাদিত হয় বাদাম, ভুট্টা, মসুর ডাল, বোরো ধান ও মিষ্টি আলুসহ বিভিন্ন পণ্য। এসব পণ্যও ঘোড়ার গাড়ি করে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যায় চরের কৃষকরা। এ চিত্র ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলের।
ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর কারণে একবারে বিচ্ছিন্ন গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও গজারিয়া ইউনিয়ন। এসব এলাকায় রাস্তাঘাট নেই বললেই চলে। এ চরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা আর শুকনো মৌসুমে একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি।
ইউনিয়নগুলোর খাটিয়ামারি, জিগাবাড়ি, পেপুলিয়া, গাবগাছি, গলনা, জিয়াডাঙ্গা, সাতারকান্দি, রসুলপুর, খাটিয়ামারি, ফুলছড়ি, টেংরাকান্দি ও বাজে ফুলছড়িসহ প্রায় ৫০টি এলাকায় কোনো যানবাহন চলাচলের উপায় নেই। এসব চরাঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিত ফসল খেত থেকে ঘরে তোলা ও উপজেলা সদরে বিক্রির জন্য নদীর ঘাটে নেওয়ার ভরসাও ঘোড়ার গাড়ি।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানি কমে যাওয়ার কারণে ব্রহ্মপুত্র এখন মরুভূমির মতো হয়ে গেছে। ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন চরে মালামাল বহনে ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। গাড়ি চালিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। এই গাড়ি ব্যবহারের ফলে যেমন কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সহজ হয়েছে, তেমনি কমছে পরিবহন খরচও।
ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি চরের ময়নুল ইসলাম বলেন, একটি ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে প্রতিদিন হাজার টাকা আয় হয়। এই আয়েই সংসার চলে তার। প্রতিদিন নদীর ঘাট থেকে মালামাল আনা নেওয়া করে গত পাঁচ বছরে সংসারের বেশ উন্নতি হয়েছে। তিনি আগে দিনমজুর হিসেবে প্রতিদিন তিনশ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচশ টাকা আয় করতেন। আর এখন তিনি প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকাও আয় করেন।
ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, ডিসেম্বর থেকে মে মাসের প্রথম দিকে প্রমত্ত তিস্তা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে গেলে বিশাল চর জেগে ওঠে। এসময় নৌ চলাচলের ঘাট প্রায় চার কিলোমিটার দূরে সরে যায়। তখন চরের মানুষের কাছে ঘোড়ার গাড়ি যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে এসব এলাকার চার শতাধিক পরিবার ঘোড়াগাড়ি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন। এতে করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধার সাত উপজেলার ৮২ ইউনিয়নে দেড়শটিরও বেশি চর রয়েছে। এসব চরের মূল বাহন ঘোড়ার গাড়ি।
Comments