ভূমিকম্প বিমা : বাংলাদেশে এক ভুলে যাওয়া বিষয়
ঢাকা শহরের মানুষ যখন প্রতিদিনের ব্যস্ততায় হারিয়ে থাকে, তখন মাটির নিচে স্তরে স্তরে নীরবে এগিয়ে চলে অদৃশ্য এক বাস্তবতা- ভূমিকম্পের সম্ভাবনা। কেউ জানে না কখন সেটা হঠাৎ দরজায় কড়া নেড়ে বলবে, আমি এসেছি।
ঠিক এই অনিশ্চয়তাকে মাথায় রেখেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেয়াল মজবুত করা দরকার, ঠিকই। কিন্তু আর্থিক নিরাপত্তা না থাকলে পুনর্গঠনের পথটাই সবচেয়ে কঠিন হয়ে যায়।
দেশে বাড়ি বা ব্যবসায়িক স্থাপনার মালিকদের বড় অংশই জানেন না যে, অগ্নিবিমার সঙ্গে খুব সহজেই ভূমিকম্পবিমাও নেওয়া যায়। আর আশ্চর্যের বিষয়-এর খরচও খুব একটা বেশি নয়। প্রতি হাজার টাকার বিপরীতে প্রিমিয়াম দাঁড়ায় মাত্র ৪০ পয়সা থেকে ৩ টাকা ১০ পয়সা পর্যন্ত। ঝুঁকির এলাকা, ভবনের গঠন, নির্মাণমান-এসব দেখে সিদ্ধান্ত হয়, কোন সম্পত্তির জন্য কত প্রিমিয়াম।
বাড়ির দলিল,অবস্থান,আয়তন,আনুমানিক বাজারমূল্য আর কিছু ছবি -এই নথিগুলো দিলেই অনেক বিমা কোম্পানি ভূমিকম্প বিমা করে দেয়। তবে চুক্তির ভাষা অবশ্যই স্পষ্ট হতে হবে, কারণ বিপর্যয়ের সময় দাবি উত্থাপনই বড় পরীক্ষায় ফেলে বিমাগ্রহীতাকে।
বাংলাদেশ ভূমিকম্প–ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে থাকা সত্ত্বেও মানুষ এই নিরাপত্তাটুকুকে গুরুত্ব দেয় না। কারণ দুর্যোগ আসে হঠাৎ, আর্থিক ক্ষতি কমানোর প্রস্তুতি নিতে হয় আগেই। তাই প্রচারণা বাড়াতে হবে, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে, এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ভূমিকম্প বিমাকে প্রায় বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে।
কেউ যখন বাড়ি বানায়, তখন দেয়ালের ইট কতটা শক্ত সেই চিন্তা থাকে। কিন্তু ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কীভাবে সেই বাড়ি আবার দাঁড়াবে, সেই চিন্তাটাই আমরা বেশিরভাগ সময় ভুলে যাই।
এই জায়গাতেই বিমা কাজ করে। এটা বিপদ ঠেকায় না, কিন্তু বিপদের পরে বাঁচার পথটা তৈরি করে দেয়।
Comments