বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং দেশ গঠনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা
১৯৭১ সালে ৯ মাস দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে একটি সতন দেশ হিসেবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সময় গঠিত হয় এ দেশের সশস্ত্র বাহিনী। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২১ নভেম্বর একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ওপর সমন্বিত আক্রমণ পরিচাঙ্ক্ষা করে, যা আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনীর সমন্বিত আক্রমণ ছিল মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক অভিধান পরিকল্পনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রণকৌশলগত পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনে সশর বাহিনীর সদস্যদের বীরত্বগাথা ও ত্যাগের ইতিহাসকে সম্রদ্ধচিত্তে স্মরণ রাখার অভিপ্রায়ে ১৯৮৬ সালে প্রথম বারের মতো ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয় এর পর থেকে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে একযোগে সশস্ত্র বাহিনী দিবস পালন করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী 'অপারেশন সার্চলাইট' নামক দামরিক অভিযানের নামে নিরীহ বাঙালিদের ওপর অন্ত১২ ঝঝাঁপিয়ে পড়ে। এর প্রত্যুভরে, তদানীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কর্মরত কর্মরত পূর্ব পাকিস্তানের সেনা সদস্যগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিকামী জনসাধারণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেন এবং সশস্ত্র পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৬ মার্চ ১৯৭১-এর পরবর্তী সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত বাঙালি সেনা সদস্যগণ ইপিআর, আনসার ও মুক্তিকামী সাধারণ জনসাধারণকে সঙ্গে নিয়ে নিভিন্ন চন্টে যুদ্ধ শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১২ এপ্রিল ১৯৭১ সালে কর্নেল (তাব.) এম এ জি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাঙালি সেনাসদস্যদের তত্ত্ববধানে স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণে ইচ্ছুক সদ্যদের সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এবং তাদের সমন্বয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করা হয় কর্নেল ওসমানী মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর শক্তিশালী মুক্তিবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী গঠন করার লক্ষ্যে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের রণকৌশলগত এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এর পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থাটার ওপর ভিত্তি করে তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুমে যুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ১১টি সেক্টরের মধ্যে ৬ নম্বর সেক্টর এবং ১০ নম্বর সেক্টর ছাড়া অবশিষ্ট ১টি সেক্টরের নেতৃত্বের ভার দেওয়া হয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষিত এবং চৌকশ কর্মকর্তাদের কাঁধে নভেম্বর ও ডিসেম্বর এই দুই মাসের জন্য ১১ নম্বর সেক্টরকে নেতৃত্ব দেন স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহ।
১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি হানাদর বাহিনী এবং বাঙালি মুক্তিবাহিনীর মধ্যকার সামরিক যুদ্ধটি ও ছিল একটি অসম সামরিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর কাছে ছিল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, সাঁজোয়া যান, ভারী কামান, অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় সামরিক অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, অন্যদিকে যুদ্ধের প্রারম্ভে মুক্তিবাহিনীর কাছে ছিল না কোনো যুদ্ধবিমান, সাঁজোয়া যান, ভারী কামান, উল্লেখযোগ্য কোনো সামরিক অস্ত্র কিংবা পর্যান্তসংখ্যক গোলাবারুদ। এই অসম যুদ্ধে জয়লাভ করার লক্ষ্যে নির্ভীক সেক্টর কমান্ডারগণ মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে গেরিলা যুদ্ধো পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তাদের প্রাথমিক লক্ষা ছিল অতর্কিত গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে দখলদার হানাদার বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা, যুদ্ধাস্ত্র, রসদ সরবরাহ, কমিউনিকেশন সেন্টার ইত্যাদি ধ্বংসের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক সক্ষমতা হ্রাস করে তাদের মনোবল দুর্বল করে দেওয়া এবং পাশাপাশি সম্ভব হলে যুদ্ধাস্ত্র ও রসদভান্ডারের সামগ্রী দখল করে নেওয়া, যা পরবর্তীকালে মুক্তিবাহিনীর বিজয় লাভের সোপান হিসেবে কাজ করবে এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা ছোট ছোট চোরালেস্তা হামলার মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর সামরিক সক্ষমতার উল্লেখযোগ্য ক্ষতিসাধনে সক্ষম হয় এবং তাদের নিজস্ব রসদভান্ডারও সমৃদ্ধ করতে। সমর্থ হয়। সময়ের পরিক্রমায় প্রথাগত সামরিক অভিযান পরিচালনার লক্ষ্যে তিন জন কমান্ডারের নামের আদ্যাক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে এস ফোর্স, বেক ফোর্স এবং জেড ফোর্স নামে তিনটি ব্রিগেড সাইজ ফোর্স গঠন করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অকুতোভয় বীর সেনানিদের বলিষ্ঠ আভিধানিক নেতৃত্ব, আয়াত্যাগ ও মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে সমন্বিত আক্রমণ পরিচালনার মাথামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করা সম্ভব হয়। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে থেকে মুক্তিকামী সাধারণ মানুষকে নিয়ে মুক্তিবাহিনী গঠন করে তাদের রণকৌশল এবং অস্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিজয়ের আগ পর্যন্ত হানাদর বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা, যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সামরিক অবকাঠামো প্রস্তুত করা, মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়কসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্ব প্রদান, রণকৌশলগত প্রতিরোধের মাধ্যমে সমন্বিত লড়াই করাসহ প্রতিটি পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তাদের আত্মত্যাগ ও নিরলস প্রচেষ্টাই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রাহুগ্রাস থেকে আমাদের এনে দিয়েছে স্বাধীনতার লাল সূর্য। মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অদম্য সাহসিকতা প্রদর্শন এবং অনবদ্য ভূমিকা পালনের অন্য সেনাবাহিনীর ২৮৮ জন সদস্যকে বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নৌবাহিনীর অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত থেকে প্রাপ্ত দুইটি টহল জাহাজ 'পদ্মা' ও 'পলাশ' এবং ৪৯ জন নাবিক নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে নৌবাহিনীর অকতোভয় কমান্ডোগণ ১৫ আগষ্ট ১৯৭১ সালে 'অপারেশন জ্যাকপট'-এর মাধ্যমে একযোগে দেশের প্রধান নৌবন্দরগুলোতে আক্রমণ করে ২৬টি পাকিস্তানি জাহাজ ও পনবোট ডুবিয়ে দিয়ে সমুদ্র ও নদীপথে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তারা দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় এলাকা নিয়ে গঠিত ১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ পরিচালনা করে। এছাড়া নৌ-গেরিলা বাহিনী অন্যান্য সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নৌ পথে পরিচালিত সামরিক অভিযানে অংশগ্রহণ করে। তাদের দুঃসাহসিক অভিযানের ফলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নৌপথে তাদের যুদ্ধ সরঞ্জামাদি এবং রসদ পরিবহনে ব্যর্থ হয়, যা যুদ্ধের পতিপথ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতাযুদ্ধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনের জন্য নৌবাহিনীর ২৪ জন সদস্যকে বিভিন্ন বীরত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিমান বাহিনীর অবদানও বিশেষয়াবে উল্লেখযোগ্য। যুজের শুরুতে মুক্তিবাহিনীর কাছে কোনো যুদ্ধবিমান ছিল না। তথাপি মোট ৩৫ জন অফিসার ও ক্যাডেট এবং আনুমানিক ৫০০ জন বিমান সেনা পশ্চিম পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত থেকে প্রান্ত আমেরিকার তৈরি একটি পুরোনো ডিসি-৩ বিমান, কানাডার তৈরি একটি অটার বিমান এবং জাকের তৈরি একটি অ্যালুয়েট-৩ হেলিকপটারের বছর নিয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় এসব বিমান পরিচালনার জন্য তারকের নাগাল্যান্ডের ডিমাপুরে একটি পরিত্যক্ত রানওয়ে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া যায় এ সস্ময় মুক্তিযুদ্ধো উপ-অধিনায়ক গ্রুপ-ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারকে বিমান বাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বিমান বাহিনী তানের বিষয়টি গোপন রাখায়া লক্ষেন এর গুপ্ত নাম দেওয়া হয় 'কিলো ফ্লাইট'। অল্প কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কাউকে এই তথ্য জানানো হয়নি। বিভিন্ন সেক্টরে যুদ্ধরত ৫৮ জন বিমানসেনা কিলো ফ্লাইটে যোগ দেন। এই ফ্লাইটের নেতৃত্ব দেওয়া হয় স্কোয়াড্রন লিডার সুলতান মাহমুদকে কিলো ফ্লাইটের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও লালমনিরহাট এলাকায় সাফল্যের সঙ্গে মোট ৫০টি অভিযান পরিচালনা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরশ বিমান বাহিনীর মোট ২৩ জন সদস্যকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত করা হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জন্মলাভ করা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে দেশ রক্ষার ২২৮ন এক নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যগণ নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। বিশ্বের জাতৃপ্রতিম প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশে সস্ত্র বাহিনী নিজেদের পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে বন্ধপরিকর। শুধু বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে দেশকে রক্ষাই নয়, বরং অভ্যন্তরীণ যে কোনো ক্রান্তিলগ্নেও দেশমাতৃকার সেবায় সদা নিয়োজিত আমাদের সশস্ত্র বাহিনী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দেশের উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশ গঠনোও সস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা ভূয়সী প্রশংসার দাবিদার। 'সমরে আমরা শান্তিতে আমরা, সর্বত্র আমরা দেশের তরে'-এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত স্নোবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যগণ দেশকে বহিঃশত্রুণরা হাত থেকে রক্ষায় নিরলস প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নিমিত্তে সন্ত্রাস দমন, অবৈধ এক্র উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার মতো দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপজ নিশ্চিতকল্পে সহায়তা প্রদান করছে।
এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ; যেমন-কন্যা, ঘূর্ণিপড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদিতে ত্রাণ ও চিকিৎসা-সহায়তা প্রদানসহ উদ্ধারকাজে মানবিক সহায়তা প্রদন করছে। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড'-এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন জনবল প্রেরণের মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভূমিকা পালনের পাশাপাশি শান্তিরক্ষী মিশন থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও সেনাসদস্যগণ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর চৌকশ ইঞ্জিনিয়ার দল দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট, কাভার্ট, ব্রিজ তৈরিসহ বিভিন্ন জাতীয় উন্নয়নমূলক কাজে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। দেশের দক্ষিণ অংশ জুড়ে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এই বিশাল জলরাশির নিরাপজ বিধানে সর্বদল প্রস্তুত বাংলাদেশ নৌবাহিনী। 'শান্তিতে সংগ্রামে সমুদ্রে দুর্জয়'-মূলমঙ্গে উজ্জীবিত নৌবাহিনীর সদস্যগণ দেশের বিস্তীর্ণ নৌপথে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, চোরাচালান প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগেও জনগণের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে চলছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর মতো নৌবাহিনীও বিভিন্ন স্কুল, কলেক্ষ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে অংশগ্রহণ করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
সেনা ও নৌবাহিনীর মতোই দেশের সার্বিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 'বাংলার আকাশ রাখিব মুক্ত'-এই মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত বিমান সেমাপণ দেশের আকাশ বহিঃশত্রুর হাত থেকে রক্ষায় সর্বদা নিয়োজিত রয়েছে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিমান বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্ন সোর দাবিদার। এছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিমান কাহিনী নিয়মিতভাবে ব্রাশ, চিকিৎসা-সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য মানবিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনেও বাংলাদেশ বিমান। বাহিনীর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বন্ধুপ্রতিম বিভিন্ন দেশ; যেমন-নেপাল, শ্রীলঙ্কা, জাপান, কুররস্ক ইত্যাদির প্রাকৃতিক দুর্যোগে চ বাহিনীর সদস্যগণ মানবিক সহায়তা প্রদান করে বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশবাসীর মুখ উজ্জ্বল করেছেন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা জাতীয় পর্যায়ের বেশ কিছু লোকসানি প্রতিষ্ঠান; যেমন-বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি, খুলনা স্পিইয়ার্ড লিমিটেড, বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড ইত্যাদির দায়িত্ব। নিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে অসহায় ভূমিহীন মানুষের মধ্যে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকজের মাধ্যমে গৃহসংস্থানের বাবস্থা করে দেওয়া প্রশংসার দাবিদার।
সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ এবং বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের নিরাপত্তা, আছা, ভালোবাসা ও নির্ভরতার প্রতীক। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাসংগ্রামের সূচনালগ্ন থেকে অদ্যাবধি দেশের সব প্রয়োজনে দেশমাতৃকার আজাবহ হয়ে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর ক বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণই মুক্তিযুদ্ধের গতিপথ পালটে দিয়েছিল, যার চূড়ান্ত রূপ হলো ১৬ ডিসেম্বর আমাদের মহান বিজয়। দেশপ্রেমের মহান আদর্শকে সামনে রেখে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়ন যাত্রার সহযোগী হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। 'আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যাব'-এটাই হোক আমাদের আজকের অঙ্গীকার।
লেখক: সেনা কর্মকর্তা
Comments