তোমার বিবি কয়টা?-সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে মজার ছলে ট্রাম্পের জিজ্ঞাসা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ডেকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে খুবই ব্যক্তিগত ও বিব্রতকর এক প্রশ্ন করেছেন। ট্রাম্প সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন যে 'তোমার বিবি কয়টা?' ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
আহমেদ আল-শারা হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেন পাশের একটি ফটক দিয়ে, মূল ফটক দিয়ে নয়। প্রবেশের আগেই সাংবাদিকেরা শারাকে তাঁর অতীত জীবন নিয়ে বিব্রতকর প্রশ্ন করতে থাকেন। যদিও শারা এসবে কর্ণপাত করেননি। তবে হোয়াইট হাউসেও প্রায় একই রকম বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয় আল-শারার জন্য এবং এবারে এই পরিস্থিতি তৈরি করেন খোদ আমন্ত্রণদাতা ট্রাম্প।
এক ভিডিওতে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আল-শারাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিচ্ছেন। এরপর দেরাজ থেকে নিজের ব্র্যান্ডের কোলোনের সোনালি ঢাকনার একটি পারফিউম স্প্রে বের করেন ট্রাম্প। সেটির ঢাকনা খুলে ট্রাম্প বলেন, 'এটা পুরুষদের জন্য পারফিউম। এটা সবচেয়ে ভালো সুগন্ধি, ঠিক আছে?' তবে এ বিষয়ে আল-শারাকে খুব একটা আগ্রহী বলে মনে হয়নি।
এরপর ট্রাম্প আরও একটি পারফিউমের বোতল এগিয়ে দেন শারার দিকে এবং বলেন, দ্বিতীয় বোতলটি তাঁর স্ত্রীর জন্য। এরপর মজার ছলে জিজ্ঞেস করেন, 'তোমার কয়জন বিবি আছে? একজন?' এরপর আল-শারা যখন হেসে জানান যে তাঁর মাত্র একজনই স্ত্রী আছেন, তখন ট্রাম্প হেসে তাঁর হাতে চাপড় দেন।
এ সময় ট্রাম্প আল-শারাকে অপ্রস্তুত করে আবারও বলেন, 'তোমাদের ক্ষেত্রে আমি কখনো নিশ্চিত হতে পারি না।' ইসলামে কঠোর শর্ত সাপেক্ষে চারজন স্ত্রী রাখার অনুমতির প্রসঙ্গ টেনে ট্রাম্পের এই রসিকতা একদম বিপরীত এক পরিবেশের ইঙ্গিত দেয়।
ওয়াশিংটন সফর ছিল শারার আন্তর্জাতিক সংযোগের প্রচারণার অংশ। তিনি যুদ্ধের পোশাক ছেড়ে এখন প্রচার করছেন এক নতুন বার্তা—তাঁর দল হায়াত তাহরির আল-শাম পশ্চিমা বিশ্বের জন্য কোনো হুমকি নয়, বরং তারা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সরকারকে উৎখাত করে নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।
এতে ট্রাম্প পড়েছেন এক সূক্ষ্ম কূটনৈতিক ভারসাম্যের মধ্যে। ট্রাম্পের কঠোরপন্থী সমর্থকেরা; যেমন লরা লুমার হোয়াইট হাউসে এই সাক্ষাতের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
সোমবার আল-শারার সফরের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সাধারণ রাষ্ট্রীয় অতিথিদের মতো সম্মান দেওয়া হয়নি। প্রথা অনুসারে তিনি মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেননি, তাঁকে হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট উইংয়ের সামনে লিমোজিন থেকেও নামানো হয়নি, তাঁর দেশের পতাকা হোয়াইট হাউসে ছিল না। এমনকি হোয়াইট হাউসের দরজায়ও কেউ তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানায়নি।
ট্রাম্প-শারা বৈঠকের এক দিন পর সিরিয়ার কর্মকর্তা ঘোষণা দেন, তাদের দেশ আইসিস-বিরোধী বৈশ্বিক জোটে যোগ দিয়েছে। বিনিময়ে, ট্রাম্প সোমবার সিরিয়ার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বসানো 'সিজার অ্যাক্ট' নিষেধাজ্ঞার মেয়াদে ছাড় দেন। স্থায়ীভাবে তা প্রত্যাহারের জন্য অবশ্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
বৈঠকের পর ট্রাম্প আল-শারার ব্যাপারে তাঁর প্রশংসা গোপন রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, 'সে এসেছে এক ভয়ংকর কঠিন জায়গা থেকে, আর সে নিজেও কঠিন মানুষ। আমি তাকে পছন্দ করি।'
উল্লেখ্য, আহমেদ আল-শারার স্ত্রীর নাম লতিফা আল-দ্রৌবি। তাঁর জন্ম ১৯৮৪ সালের দিকে। দামেস্ক ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নকালে আল-শারার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তাঁরা ২০১২ সালের দিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে।
Comments