জুলাই সনদ ও গণভোটে টানাপোড়েন: উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোট নিয়ে দেশের রাজনীতিতে টানাপোড়েন চরমে উঠেছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘ আলোচনার পর যেসব বিষয়ে সমঝোতা হয়েছিল, এখন তার বাস্তবায়ন নিয়ে বিপরীত মেরুতে অবস্থান নিয়েছে দুই দল - বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। সংলাপের টেবিল ছেড়ে দুই দলই এখন রাজপথে, ফলে উত্তেজনা বাড়ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।
জামায়াত জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি এবং নভেম্বরের মধ্যেই ওই আদেশের ওপর গণভোট আয়োজনের দাবিতে অনড়। পাশাপাশি তারা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দুই কক্ষের জন্য 'সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব' তথা পিআর পদ্ধতি চালুরও দাবি জানিয়েছে। এই দাবির পক্ষে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিস, জাগপা, নেজামে ইসলাম পার্টি, ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনসহ আটটি দল রাজপথে কর্মসূচি দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল পুরানা পল্টনে গণসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত।
অন্যদিকে বিএনপি মনে করছে,জামায়াতের নেতৃত্বে ৮ দলের এই কর্মসূচি আসন্ন নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল। দলটির নেতারা ৭ নভেম্বরের শোভাযাত্রায় ইঙ্গিত দিয়েছেন,তারাও রাজপথে নামবেন।
রাজনীতির এই উত্তাপে বাড়ছে কথার লড়াইও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন,"নির্বাচন নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হলেও একটি পক্ষ তা বিলম্বিত করতে মাঠে নেমেছে। যারা বিলম্ব চায়,তারা কি গণতন্ত্রের পক্ষে?"
অন্যদিকে জামায়াত বলছে, রাজপথ ও সংলাপ -দুটোই গণতন্ত্রের অংশ। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, "আমরা নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব, কিন্তু ঘি আমাদের লাগবেই। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হবেই।" ১১ নভেম্বরের সমাবেশকে সামনে রেখে ইসলামী আন্দোলনও গতকাল প্রস্তুতি সভা করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নির্বাচনের পথ রুদ্ধ করতে পারে। সবারই অভিমত উত্তেজনা না কমলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবাই নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাশায় আছে, কিন্তু সমঝোতা না হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এদিকে ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার রায়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হবে। সেদিন 'ঢাকা লকডাউন' কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলটির পেজ থেকে এই ঘোষণা দিয়ে বিভিন্ন হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।
এই কর্মসূচি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে। পুলিশ সূত্র জানায়, ১১ ও ১৩ নভেম্বরের কর্মসূচিকে সামনে রেখে আগাম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে পুলিশকে রায়ট গিয়ার,হেলমেট ও বডি আর্মারসহ অবস্থান নিতে দেখা যায়। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও যানবাহন তল্লাশি চালানো হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে ককটেল বিস্ফোরণ ও নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ঝটিকা মিছিলের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে।
সব মিলিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন,গণভোটের দাবি ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে রাজনীতির মাঠ এখন অস্থির ও উত্তপ্ত। বিশ্লেষকেরা বলছেন,এই অচলাবস্থা নিরসনে এখন প্রয়োজন সংলাপ ও সহনশীলতার রাজনীতি।
Comments