মেট্রোরেল ও সেতুতে কেন ‘বিয়ারিং প্যাড’ বসানো হয়?
 
রাজধানীর ফার্মগেট অংশে মেট্রোরেলের পিলারের একটি 'বিয়ারিং প্যাড' খুলে নিচে পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মেট্রোরেলে একটি 'বিয়ারিং প্যাড' খুলে পড়ে। এ কারণে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। সেবার প্রাণহানি না ঘটলেও এবার একজন নিহত হন। এ ঘটনায় জনমনে বিয়ারিং প্যাড নিয়ে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।
'বিয়ারিং প্যাড' কী
মেট্রো রেললাইনের নিচের অংশে উড়ালপথের পিলারের সঙ্গে রাবারের তৈরি 'বিয়ারিং প্যাড' থাকে। এটা সেতু বা উড়াল সেতুতে বসানো হয় কম্পন প্রতিরোধের জন্য। এগুলোর প্রতিটি আনুমানিক ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি ওজনের হয়। এসব 'বিয়ারিং প্যাড' ছাড়া ট্রেন চালালে উড়ালপথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইলাস্টোমোরিক বিয়ারিং প্যাড নিওপ্রেন বা প্রাকৃতিক রাবার দিয়ে তৈরি, যা পিয়ার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো হয়। কোনোটির ভেতরে কয়েক পরতে থাকে স্টিলের কাঠামো, আর ওপরে থাকে রাবার।
ঝাঁকুনি প্রতিরোধের পাশাপাশি সেতু বা ফ্লাইওভারকে টেকসই করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে 'বিয়ারিং প্যাড'। দীর্ঘদিন ব্যবহারের কারণে সেতু বা ফ্লাইওভারের অবকাঠামোর যে ক্ষয় হয়, 'বিয়ারিং প্যাড' সেটিকেও প্রতিরোধ করে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, 'কোনো সেতুর পিয়ার ও গার্ডারের মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা সৃষ্টির জন্য এই ধরনের রাবার প্যাড ব্যবহার করা হয়। এগুলো বাংলাদেশেও তৈরি হয়, আবার বিদেশ থেকেও আনানো যায়। এক একটি প্যাডের ওজন হতে পারে ৫০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত। বুয়েট এসব রাবার প্যাডের কার্যকারিতা পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেয়।'
এখন প্রশ্ন উঠেছে সেপ্টেম্বর ঘটনার পর তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা হয়েছিল কি না। হয়ে থাকলে আবার কেন এ ঘটনা ঘটল।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মেট্রোরেল পরিচালনকারী কোম্পানি ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক আহমেদ বলেছেন, "আগের কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সবগুলো পিলার ফিজিক্যালি এক্সপার্ট দিয়ে পরিদর্শন করা হয়েছিল।"
রোববার দুপুরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে যখন তিনি কথা বলছিলেন, পাশেই ছিলেন সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান। আঙ্গুল তুলে তিনি প্রশ্ন করেন, "তাহলে এটা হলো কীভাবে?"
ওই ঘটনায় কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কি না, জানতে চান সংবাদকর্মীরা।
জবাবে ডিএমটিসিএলের এমডি ফারুক বলেন, "তখন বলা হয়েছিল ডিফেক্ট লাইবেলিটি পিরিয়ডের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। তাই ওই বিষয়টি সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তাদেরকে (ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে)। তারা তখন বলেছে, তারা সেটা সংশোধন করেছে।"
এ সময় উপদেষ্টা ফাওজুল বলেন, "এটা জাপানি ঠিকাদাররা করেছে। এখানে বলা হচ্ছে এটা ডিফেক্ট লাইবেলিটি পিরিয়ডের মধ্যে ঘটেছে। তবে এখন যে কমিটি হচ্ছে এই কমিটি আগের কমিটির রিপোর্টও দেখবে।"
রোববার দুর্ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
 
  
 
 
 
Comments