শেবাচিমের স্টাফ কোয়ার্টারের পুকুর দখল করে পাকা স্টল নির্মানের পায়তারা
বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৪র্থ শ্রেনী কোয়াটার এলাকা দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। সরকারী জমিতে দোকান ঘর নির্মান করে গড়ে তুলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যা থেকে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি মহল। গণঅভ্যুত্থান ৫ আগস্টের পর হাসপাতালের অনেক কিছু পরিবর্তন হলেও অবৈধ্য দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারেনী হাসপাতাল কতৃপক্ষ। সরকারী পুকুর দখল করে মাছ চাষ এবং তার পাড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে পাকা স্থাপনা। বিষয়টি কতৃপক্ষের নজরে আসলেও এখনও বহাল তবিয়তে চলছে এসব কার্যক্রম।
ততকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আমলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্র ছায়ায় হাসপাতালের ৪র্থ শ্রেনী কোয়াটার এলাকার প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে ভিতরের অংশে অর্ধ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। সেখান থেকে প্রতি মাসে মোটা অংকের টাকা তুলছেন নামধারী কিছু ব্যাক্তি। আর তারাই এখন সেই সরকারী জমিতে পাকা স্থাপনা করার পায়তারা চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে সরকারী পুকুরের পাড় ভরাট করে ১২টি স্টল নির্মান করার জন্য পাকা স্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে গেলে দেখা যায় দীর্ঘদিন সরকারী পুকুর দখল করে হোটেল ব্যবসা করা মো. সুমন বলেন, গত জুলাই মাস থেকে পাশে থাকা ৪র্থ শ্রেণী স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদে মাসে ২৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন তিনি। এর আগে নিজেই ভোগকরতেন ঐ অর্থ। সুমন শুধু নিজের হোটেলই নয় তার আশে পাশের বেশ কয়েকটি দেকান ঘর ভাড়াও দিয়েছেন। সরকারী পুকুরের উপরে এভাবে দোকান ঘর নির্মান করে দীর্ঘদিন ধরে বহাল তবিয়তে ব্যবসা করে আসছেন সুমনরা।
এরকমই ৪র্থ শ্রেণী স্টাফ কোয়াটার প্রবেশ পথে ফল বিক্রেতা, পানের দোকান, চায়ের দেকান থেকে শুরু করে প্রতিটি দোকান থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধীক টাকা উঠানো হয়। আসলে এই টাকা কোথায় যাচ্ছে সে ব্যাপারে কেহই মুখ খুলতে রাজি হয়নী। কিছু ব্যবসায়ী জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তারা ব্যবসা করছেন।
অপর দিকে মসজিদের দেয়াল ঘেসে পুকুরের পাড়ে উঠানো হচ্ছে পাকা দোকান ঘর । সরকারী পুকুরের পাড়টি ভেঙ্গে যাওয়াতে গাইড ওয়াল নির্মান করার কথা ছিল মসজিদের দেয়াল লাগোয়া। কিন্তু সেখানে প্রায় ১৫ ফুট পুকুরের ভিতরে গাইড ওয়াল নির্মান করে ওঠানো হচ্ছে দুইতলা বিশিষ্ট পাকা দোকান ঘর। ইতিমধ্যে নিচের পাইলিং শেষ করে পিলার করার কাজ চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে ৪র্থ শ্রেণী স্টাফ কোয়াটার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আবদুল মান্নান বলেন, হাসপাতাল পরিচালকের অনুমতি নিয়ে এই স্থাপনা গড়ে তোলা হচ্ছে। এখানে নিচে দোকান, গোডাউন ও উপরে (দুইতলায়) হেফজোখানা করা হবে। যেখানে ছাত্ররা থাকবে।
এদিকে সরকারী ঐ জমিতে দীর্ঘদিন গোডাউন নির্মান করে দখলে থাকা মসজিদ কমিটির সদস্য মো. লিমন দাবি করেন ৩০ বছর আগ থেকে তার গোডাউন ছিল ওই জমিতে। এখন মসজিদের খরচ জোগাতে রেজুলেশন করে পাকাস্থাপনা নির্মান করা হচ্ছে। তবে মসজিদের রেজুলেশনে দেখা যায় মসজিদের দ্বিতীয় তলার কাজ করনে অনুমতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন হাসপাতাল পরিচালক। সেখানে স্পস্ট লেখা রয়েছে মসজিদের দ্বিতীয় তলার কাজ সম্পন্ন করার জন্য।
এ বিষয়ে মসজিদ কমিটির সদস্য মো. লিমন জানান, মসজিদটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের না কিন্তু স্থানীয়রা সাহায্য সহযোগীতা করে উঠিয়েছেন। সেখানে ১ তলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় তলার কাজা এখনও সম্পন্ন হয়নী। তবে লিমন কে সরকারী জমিতে স্টল নির্মানের ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মসজিদ পরিচালনায় কস্ট হচ্ছে তাই গোডাউন নির্মান করা হচ্ছে। ওখান থেকে যে ভাড়া পাওয়া যাবে তা দিয়ে মসজিদ পরিচালনা করা যাবে।
স্টল বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে লিমন বলেন, যারা স্টল নিবেন তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে নিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। বাকিটা বরাদ্দ দেয়ার সময় নেয়া হবে।
কিন্তু কথা হলো সিটি করপোরেশনের কোন প্লান কিংবা অনুমতি না নিয়ে সরকারী জমিতে স্টল নির্মান করছেন তারা। দোহাই দিচ্ছেন মসজিদের। ইতিমধ্যে প্রায় ১২টি স্টলের বরাদ্দ বাবদ অগ্রীম টাকা তুলে প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করে ফেলেছেন মসজিদ কমিটির সদস্যরা। কোন নিয়ম নিতি কিংবা কোন দরপত্র ছাড়াই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই স্টল বরাদ্দ দিয়ে দিল মসজিদ কমিটির এই সদস্যরা।
আশ্চর্য জনক বিষয় হলো এ ব্যাপারে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মশিউল মুনীর বলেন, সরকারী জমিতে পাকা স্থাপনা করা যায় কিনা সেটা আমার যানা নেই। যদিও এখনও পাকা স্থাপনা নির্মান হয়নী। যদিও কেউ পায়তারা করে থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার অশুভ ইচ্ছা আছে। আমি দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জানান, দেশের ইতিহাসে এরকম কোন নজির নেই সরকারী জমিতে স্টল নির্মান করে ভাড়া দেয়া হবে। আর সেটা পুকুরের পাড় ভরাট করে পরিবেশের ক্ষতি করে এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। হাসপাতাল পরিচালক কোন ব্যবস্থা না নিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
সচেতন মহলের দাবি দীর্ঘদিন দখল করে রাখা সরকারী এই কোয়াটারের জমি এবং পুকুর উদ্ধার করা হোক। এখনই ব্যবস্থা না নিলে দখলদার যেটুকুও বাকি আছে তাও দখল করে ফেলবে।
Comments