মাত্র ২০ লাখ টাকার বিমা কাভারেজে বিপুল ক্ষতি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে সম্প্রতি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর জানা গেছে, পুরো স্থাপনাটির বিমা কাভারেজ ছিল মাত্র ২০ লাখ টাকা। ফলে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির বিপরীতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এই সামান্য অর্থই বিমা দাবি হিসেবে পাবে।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংস্থাটি বহু বছর আগে সাধারণ বীমা করপোরেশনের (এসবিসি) মাধ্যমে কার্গো ভিলেজের একটি ছোট অংশের জন্য ২০ লাখ টাকার অগ্নিবিমা করে, যা প্রতি বছর নবায়ন করা হলেও কাভারেজের পরিমাণ আর বাড়ানো হয়নি।
এসবিসির জেনারেল ম্যানেজার এস এম শাহ আলম জানিয়েছেন, পুরো কার্গো ভিলেজ নয়, গুদামের একটি অংশের বিমা করা আছে। কাভারেজ মাত্র ২০ লাখ টাকা। অথচ অগ্নিবিমা প্রোডাক্টে আনলিমিটেড কাভারেজ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তারা প্রিমিয়াম খরচ কমাতে এই সীমিত কাভারেজ নিয়েছে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) মুখপাত্র সাইফুন্নাহার সুমি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সংস্থাটি শিগগিরই স্থানীয় বিমা কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডে কারা পলিসি ইস্যু করেছে ও দাবির পরিমাণ কত—তা জানতে চাইবে। একইসঙ্গে দ্রুত বৈধ দাবিগুলো নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেবে আইডিআরএ।
আমদানি পণ্যের ক্ষেত্রে আইনত স্থানীয় বিমা কোম্পানির মাধ্যমে বিমা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে অধিকাংশ আমদানিকারক খরচ বাঁচাতে বিদেশি, বিশেষত সরবরাহকারীর দেশের বিমা কোম্পানির মাধ্যমে বিমা করেন। অপরদিকে, রপ্তানিকৃত পণ্যের জন্য দেশে বিমা করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
এস এম শাহ আলম বলেন, বাংলাদেশে বিমা প্রিমিয়াম তুলনামূলক বেশি। তাই ব্যবসায়ীরা সাধারণত সাপ্লায়ার দেশের বিমা কোম্পানির কাছেই বিমা করে থাকেন।
ফলে কার্গো ভিলেজে পুড়ে যাওয়া আমদানি করা পণ্যের ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে বিদেশি বিমা কোম্পানির কাছ থেকে।
আইডিআরএর একটি সূত্র জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডে নাশকতার অভিযোগ প্রমাণ হলে বেবিচক বা বাংলাদেশের আমদানিকারকরা কেউই বিমা দাবি থেকে কোনো সুবিধা পাবে না—দেশীয় বা বিদেশি, কোনো বিমা কোম্পানিই তখন ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে না।
এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সংবাদ সম্মেলনে জানান, কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ডে রপ্তানিকারকদের আনুমানিক ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে সঠিক ক্ষতির পরিমাণ এখনই নিরূপণ করা সম্ভব নয়।
কার্গো ভিলেজ হলো বিমানবন্দরের একটি সমন্বিত কার্গো হাব, যেখানে আমদানি ও রপ্তানি পণ্য সংরক্ষণ, পরিদর্শন, প্যাকেজিং, কাস্টমস ছাড়পত্র ও পরিবহন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এখানে রয়েছে গুদাম, কার্গো টার্মিনাল, কাস্টমস জোন, বিশেষায়িত স্টোরেজ, কুরিয়ার কোম্পানির অফিস (যেমন ডিএইচএল ও ফেডেক্স) ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ফল ও সবজির মতো পচনশীল পণ্য সাধারণত ২৪–৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ছাড় করা হয়, আর তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় ২–৩ দিনের মধ্যে। তবে সীমিত স্পেসের কারণে রপ্তানি প্রক্রিয়ায় প্রায়ই বিলম্ব ঘটে।
Comments