আগুনে ক্ষয়ক্ষতির দায় নিতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শত শত টন আমদানি-রপ্তানি পণ্য পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বিমানবন্দরের ৮ নম্বর গেট সংলগ্ন কার্গো ভিলেজে আগুনের সূত্রপাত। ফায়ার সার্ভিস বলছে, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি কবির আহমেদ জানিয়েছেন, কার্গো ভিলেজে এই আগুনে আনুমানিক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
এই আগুনে কার্গো এক্সপ্রেস, ওয়্যারহাউজ, পণ্যবাহী বিমান, বিমানবন্দরের অবকাঠামোসহ সামগ্রিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে গেছে। এতে শুধু ব্যবসায়ীরা নয়, দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য ব্যবস্থাও বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। কার্গো ভিলেজে মূলত আমদানি ও রপ্তানির জন্য অপেক্ষমাণ পণ্য সংরক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে দেখা যায় দেশে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ড ঘটে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নিকাণ্ড ঘটে বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরো থেকে। প্রতি বছর অগ্নিকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাণহানি হচ্ছে অসংখ্য মানুষের।
অগ্নিকাণ্ডের হার ক্রমাগত কমিয়ে আনা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আন্তজার্তিক বিমানবন্দর একটি সরকারি সুরক্ষিত এলাকা। এখানে ব্যবসায়ীদের মালামাল যদি নিশ্চিন্তে রাখা না যায় তাহলে আর কোথায় সম্ভব?
অনেকের মনে এই প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে অগ্নিকাণ্ডের পর নাশকতার প্রশ্ন আসছে কেন? কেন অন্তর্ঘাত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। কেনই বা এমন সন্দেহ করা হচ্ছে যে এটা ভিন্নরূপে আগুন সন্ত্রাস? নাশকতা হলেও দায় সরকারের, কারণ সরকারকেই তদন্ত করে বের করতে হবে কারা করেছে, কেন করেছে। কিন্তু এতে করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ হয়ে যায় না। সম্পদে আগুন লাগে বা লাগানো হয় সেটা নাশকতা বা দুর্ঘটনা যাই হোক তা দেশ ও জনগণের ক্ষতি।
প্রথমেই যা ভাববে সবাই যে, ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে বীমা কোম্পানি থেকে। কিন্তু বিষয়টি এতটা সরল নয়। এত এত বীমা দাবি মেটাতে গিয়ে বীমা কোম্পানিগুলোও পড়বে বেকায়দায়। তাদেরও বিশাল আর্থিক দায় টানতে হবে। তা ছাড়া এই ঘটনার জন্য বীমা কোম্পানিগুলো কোনভাবে দায়ীও নয়।
এটি একটি জাতীয় বিপর্যয় এবং এ বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব নিতে হবে অনেক বেশি। শুধু বীমা কোম্পানির আশায় বসে থাকলে অন্যায্য কাজ হবে।
প্রথমত: বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ত্রুটির কারণে তার এই বিপুল ক্ষতির দায় স্বীকার করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান দিতে হবে। দ্বিতীয়ত: পণ্য দেশে প্রবেশের পর সকল প্রকার শুল্ক ও কর পরিশোধ সত্ত্বেও পণ্যটি সর্বশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের গোডাউনে থাকাকালীন ধ্বংস হয়েছে। তাই ব্যবসায়ীদেরকে পরিশোধিত সম্পূর্ণ কর ফেরত দিতে হবে।
Comments