শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ডের আবেদন
জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ টানা পাঁচ দিন যুক্তিতর্ক তুলে ধরে প্রধান প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।
বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাইয়ের আন্দোলনে ১৪০০ মানুষ নিহত হন। একজন মানুষকে হত্যার দায়ে যেখানে মৃত্যুদণ্ড হয়, সেখানে ১৪০০ জনকে হত্যার জন্য শেখ হাসিনার শাস্তি হওয়া উচিত ১৪০০ বার মৃত্যুদণ্ড। যদিও আইন অনুযায়ী তা সম্ভব নয়, তাই সর্বোচ্চ শাস্তি বা মৃত্যুদণ্ডই যথোপযুক্ত বলে দাবি করেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রসিকিউটর বলেন, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও সেখান থেকে আন্দোলনকারীদের হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং মামলা করা ব্যক্তিদের বাড়িঘর ধ্বংসের হুমকিও দিয়েছেন। তার বক্তব্য ও আচরণ থেকে বোঝা যায়, তিনি অপরাধের পর অনুশোচনার বিন্দুমাত্রও দেখাননি। তাকে 'হার্ডকোর অপরাধী' হিসেবে অভিহিত করেন প্রসিকিউটর এবং বলেন, তিনি ছিলেন এই মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'গ্যাং অব ফোর'–এর সদস্য কামালের বাসায় হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা হয়। ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি কমান্ড চেইনের দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন, তাই তাকেও সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার দাবি করা হয়েছে।
তবে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন যেহেতু রাজসাক্ষী হিসেবে সত্য উদঘাটনে সহযোগিতা করেছেন, তার শাস্তি নির্ধারণ আদালতের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেন প্রসিকিউটর।
এছাড়া, নিহতদের পরিবার যেন ক্ষতিপূরণ পায়, সে জন্য আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আদালতের কাছে আদেশ চাওয়া হয়েছে।
বিগত কয়েক দিন ধরে রাষ্ট্রপক্ষ বিভিন্ন তথ্যচিত্র, ফোনালাপ এবং সাক্ষীদের জবানবন্দি উপস্থাপন করে। এসব উপস্থাপনার মধ্যে ছিল শেখ হাসিনা, হাসানুল হক ইনু এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনের রেকর্ড, যা তাদের ভূমিকা প্রমাণে সহায়ক হতে পারে বলে দাবি করা হয়।
মামলাটির আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠিত হয় গত ১০ জুলাই, যেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। ৮,৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে শহীদদের তালিকা, প্রমাণপত্র, সাক্ষ্য ও জব্দতালিকা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয় ২৮ কার্যদিবসে।
গত ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
Comments