সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদীর তীর কেটে বালু লুট ঠেকাতে বাঁশের বেড়া

সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী যাদুকাটা নদীর পাড় কেটে বালু লুট বন্ধে নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দেওয়া হচ্ছে। নৌকা বা বাল্কহেড যাতে পাড় (তীর) কেটে বালু তুলতে না পারে, সে জন্য বালুমহালের ইজারাদারের পক্ষ থেকে এই বেড়া দেওয়া হচ্ছে। একই সাথে তীর কাটা বন্ধ করতে সার্বক্ষণিক ইজারাদারদের পক্ষ থেকে নদীর তীরে পাহারাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় লাউড়েরগড় এলাকায় নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দেওয়ার কাজ চলছে। এক সপ্তাহ ধরে তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী লাউড়েরগড় এলাকায় নদীর পাড় কেটে বালু তোলার ঘটনা ঘটছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে, রোববার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল। পরে জেলা প্রশাসন অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করে। বিভিন্ন সময়ে অভিযান ও জরিমানা করা হলেও বালু লুট বন্ধ হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, তাহিরপুর উপজেলার যাদুকাটা নদীতে জেলার সবচেয়ে বড় দুটি বালুমহাল রয়েছে। মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় পাঁচ মাস বন্ধ থাকার পর চলতি মাসে সেখানে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বেশি লাভের আশায় স্থানীয় কিছু বাসিন্দা নদী তীরবর্তী জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রভাবশালী একটি চক্র এসব জমি কিনে বালু বিক্রি করছে। এমনকি সরকারি জমি থেকেও বালু তোলার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালীদের সহায়তায় এ চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। নদীর পাড় কেটে বালু তোলায় আশপাশের গ্রাম ও স্থাপনা হুমকির মুখে পড়ছে। পূর্বপাড়ের সীমান্তবর্তী লাউড়ের গড় গ্রাম এবং পশ্চিমপাড়ের শিমুলবাগান ও ঘাগটিয়া গ্রাম এখন ঝুঁকিতে রয়েছে।
এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ুম মাস্টার নামের এক ব্যক্তি লাউড়েরগড় নদী পাড় কেটে ২০ টাকা প্রতি ফুট বালু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। শুধু আব্দুল কাইয়ুম নয় নদীর তীর কেটে বালু বিক্রির অভিযোগ উঠেছে অন্তত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে।
তবে, অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল কাইয়ুম মাস্টার সোমবার সন্ধ্যায় বলেন, আমি কোনো ভাবেই পার কাটার সাথে জড়িত না। প্রতিবাদ করায় আমার নাম লোকজন বলছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, যাদুকাটা নদীর দুটি বালুমহাল এবার প্রায় ১০৭ কোটি টাকায় ইজারা হয়েছে। মামলাসংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাওয়ার পর চলতি মাসে প্রশাসন ইজারাদারদের বালুমহাল বুঝিয়ে দিলে বালু উত্তোলন শুরু হয়।
বালুমহালের ইজারাদার নাসির মিয়া ও শাহ রুবেল আহমদ জানান, নদীর পাড় কাটা বন্ধ হোক, এটা তাঁরাও চান; কিন্তু স্থানীয় কিছু লোক টাকার লোভে নিজেদের জমি বিক্রি করে দেন। আবার আরেক পক্ষ এসব জমি কিনে বালু বিক্রি করে। তিনি বলেন, 'এতে আমাদের বদনাম হচ্ছে। আমরা নদীর পাড় কেটে বালু তোলা বন্ধে সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের আবেদন করেছি। বালু লুট ঠেকাতে এখন বাধ্য হয়ে নদীর তীরে বাঁশের বেড়া দিচ্ছি।'
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন, 'যাদুকাটা নদীর বালুমহাল ইজারাদারকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর আমরা খবর পাই, কিছু লোক জড়ো হয়ে মব করে অবৈধভাবে নদীর তীর কেটে বালু তোলার চেষ্টা করছেন। আমরা এই অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে টাস্কফোর্স গঠন করি। টাস্কফোর্সে বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন আছেন। এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সেখানে পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা নদী থেকে কোনোভাবেই পরিবেশ ও এলাকার ক্ষতি করে অবৈধভাবে কাউকেই বালু উত্তোলন করতে দেব না। ইজারাদারকেও সব নিয়ম মেনেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।'
Comments