হাত ধোয়ার অভ্যাস - স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রথম ধাপ

১৫ অক্টোবর 'বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস'। দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় এক সহজ কিন্তু জীবনরক্ষাকারী অভ্যাসের কথা—সাবান দিয়ে হাত ধোয়া। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলেন, "সাবান দিয়ে হাত ধোয়া হলো সবচেয়ে সাশ্রয়ী প্রতিরোধমূলক টিকা।" কিন্তু দুঃখজনকভাবে, এখনো অনেক মানুষ এই সহজ অভ্যাসটিকে অবহেলা করেন, যার ফলেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা ভাইরাসজনিত অন্যান্য সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, সঠিকভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে এসব রোগের সংক্রমণ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তবুও বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশের বহু মানুষের কাছে এখনো নিরাপদ পানি ও সাবান—এই মৌলিক জিনিস দুটি সহজলভ্য নয়। বিশেষ করে গ্রামীণ ও বস্তি এলাকায় এই অভাব প্রকট। তাই হাত ধোয়ার বার্তা কেবল সচেতনতায় সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না, এটিকে বাস্তব কর্মসূচিতে রূপ দিতে হবে।
খাবার গ্রহণের আগে ও পরে, শৌচাগার ব্যবহারের পর, বাইরে থেকে বাসায় ফেরার পর কিংবা রোগীর সেবা করার আগে-পরে—প্রতিটি ক্ষেত্রেই হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। এই অভ্যাস কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি সামাজিক দায়িত্বও বটে। বিদ্যালয়গুলোতে শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস শেখানো গেলে তারা পরিবার ও সমাজে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে।
সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার, এনজিও, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। বিভিন্ন প্রচারাভিযান, স্কুলভিত্তিক কর্মসূচি ও জনসচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে হাত ধোয়ার গুরুত্ব বোঝাতে হবে। এটি কেবল স্বাস্থ্য সুরক্ষাই নয়, অর্থনৈতিকভাবেও একটি বড় বিনিয়োগ—কারণ প্রতিরোধ চিকিৎসার চেয়ে অনেক কম ব্যয়বহুল।
আমরা প্রায়ই উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু ভুলে যাই—সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ লুকিয়ে আছে আমাদের নিজের হাতে। হাত ধোয়ার মতো ছোট্ট একটি কাজই হতে পারে সংক্রমণ প্রতিরোধের সবচেয়ে বড় ঢাল।
এই হাত ধোয়া দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক—নিজে হাত ধোব, অন্যকেও শেখাবো। কারণ সুস্থ সমাজ গড়ার শুরুটা সেখান থেকেই।
Comments