ট্রাম্প কি শান্তিতে নোবেল পাচ্ছেন?

প্রতিবছরই সবার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার। তবে এ বছর সেই আলোচনা পেয়েছে নতুন মাত্রা। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই আবার ট্রাম্পকে এর জন্য মনোনীতও করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই তাই প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম্পের কি সত্যিই নোবেল পুরস্কার পাওয়ার সম্ভাবনা আছে?
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে অসলোতে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি এই জল্পনার অবসান ঘটাবে।
ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে তিনি 'আটটি সংঘাত' সমাধান করেছেন, আর এ জন্য তিনি এই মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কারের যোগ্য। যদিও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নোবেল কমিটির পছন্দের তালিকায় হয়তো ট্রাম্প থাকবেন না– অন্তত এই বছর। আন্তর্জাতিক-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ সুইডিশ অধ্যাপক পিটার ওয়ালেনস্টিন আন্তর্জাতিক একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, না, এই বছর ট্রাম্প থাকবেন না (নোবেল কমিটির তালিকায়)। তবে হয়তো পরের বছর? তখন হয়তো তাঁর নানা উদ্যোগ, বিশেষ করে গাজা সংকট নিয়ে পদক্ষেপের বিষয়ে ধোঁয়াশা কেটে যাবে।
অনেক বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের 'শান্তি প্রতিষ্ঠার' দাবিগুলোকে অতিরঞ্জিত বলে মনে করছেন এবং তার 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির পরিণতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়ে বলছেন যে 'আটটি সংঘাত' সমাধানের জন্য তিনি এই পুরষ্কারের যোগ্য, তবে তার এই দাবি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান নিনা গ্রেগার বলেন,
গাজায় শান্তি আনার প্রচেষ্টার বাইরেও আমরা (ট্রাম্পের) এমন অনেক নীতি দেখেছি, যা নোবেলের (আলফ্রেড নোবেল) উইলে লেখা উদ্দেশ্যের পরিপন্থি। সেই উদ্দেশ্য ছিল আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, জাতির ভ্রাতৃত্ব ও নিরস্ত্রীকরণ উৎসাহিত করা।
ট্রাম্পের যেসব পদক্ষেপ নোবেল শান্তি পুরস্কারের নীতির সঙ্গে মেলে না, তার তালিকাও বেশ লম্বা বলে মত গ্রেগারের। প্রতিবেদন মতে, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বহুপাক্ষিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, মিত্র ও শত্রু উভয়ের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, ডেনমার্ক থেকে জোর করে গ্রিনল্যান্ড কেড়ে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন, মার্কিন শহরগুলোতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক স্বাধীনতার পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপরও আক্রমণ করেছেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানকারী পাঁচ সদস্যের কমিটির চেয়ারম্যান ইয়োরগেন ওয়াতনে ফ্রিডনেস বলেন, আমরা পুরো ছবিটি দেখি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্পূর্ণ ভূমিকা ও চরিত্র বিবেচনায় নেয়া হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো– শান্তির জন্য তারা বাস্তবে কী অর্জন করেছে, সেটিই আমরা দেখি।
এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ ব্যক্তি ও সংস্থাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তালিকা ৫০ বছর পর্যন্ত গোপন রাখা হয়। এবার স্পষ্টভাবে পছন্দের কোনো প্রার্থী না থাকায়, অসলোতে শুক্রবারের ঘোষণার আগে নানা নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে আছে স্বেচ্ছাসেবীদের নেটওয়ার্ক সুদানের 'ইমার্জেন্সি রেসপন্স রুমস'। তারা যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করতে ঝুঁকি নিয়ে ফেলে কাজ করছে। এছাড়াও আছেন রুশ নেতা অ্যালেক্সি নাভালনির বিধবা স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া এবং অফিস ফর ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউশনস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস নামের নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থার নাম।
নরওয়ের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক হালভার্ড লেইরা জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নোবেল কমিটির সিদ্ধান্তগুলো আবারও ক্ষুদ্র পরিসরের কাজের দিকে ফিরেছে, যা শান্তির ক্ল্যাসিক ধারণার কাছাকাছি। মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারী অধিকার এখন মূল গুরুত্ব পাচ্ছে।
সূত্র: জিও নিউজ
Comments