গ্রামীণ শিক্ষা উন্নয়নে দৃষ্টান্ত পূর্বদেলুয়া উচ্চবিদ্যালয়

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর ইউনিয়নে অবস্থিত পূর্ব দেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি একসময় অব্যবস্থাপনা, অনিয়মিত ক্লাস ও শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আজ বিদ্যালয়টি শিক্ষার আলোয় উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের পেছনে আছেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোহাম্মদ কবিরুল ইসলাম এবং অভিভাবক সদস্য শফিকুল ইসলাম ঠান্ডু।
স্বপ্ন থেকে বাস্তবায়ন:
সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে ব্যাপক উদ্যোগ নেন কবিরুল ইসলাম। তিনি বুঝেছিলেন, কেবল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে নয় নিজেকে শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত করলেই পরিবর্তন সম্ভব। তাই শুরু করেন নিয়মিত শিক্ষকদের সমন্বয় সভা, শিক্ষার্থীদের মনোবল বৃদ্ধির কর্মসূচি, এবং নিজেই শ্রেণিকক্ষে পাঠদান।
অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন তিনি নিজ হাতে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আগ্রহী করতে চালু করেছেন সাপ্তাহিক ও পাঠ্য পরীক্ষা ব্যবস্থা, যা এখন বিদ্যালয়ের একটি নিয়মিত প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।
পরিবেশ ও অবকাঠামোর পরিবর্তন:
বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশকে শিক্ষাবান্ধব করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আঙিনায় লাগানো হয়েছে বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ, যার নামকরণ করা হয়েছে গবেষণা বৃক্ষ উদ্যান'। শিক্ষার্থীরা এখানে গাছের বৃদ্ধি, যত্ন এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত নানা বিষয় হাতে-কলমে শিখছে।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা বিজ্ঞানাগারটি এখন নিয়মিতভাবে চালু রয়েছে, যেখানে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রায়োগিক ক্লাস করছে নিয়মিত। এতে তাদের বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান ও পরীক্ষামূলক দক্ষতা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া, শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপস্থিতি এখন ডিজিটাল হাজিরা সিস্টেমে রেকর্ড হয়, এবং বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুরো ক্যাম্পাসে স্থাপন করা হয়েছে সিসি ক্যামেরা। প্রতি দুই মাস অন্তর অনুষ্ঠিত হয় অভিভাবক সমাবেশ, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রগ্রেস রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয় এবং অভিভাবকদের মতামত গ্রহণ করা হয়।
ব্যক্তিগত অনুদানেই রূপান্তর:
বিদ্যালয়ের এই আমূল পরিবর্তন এসেছে সভাপতির ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন লোকের অনুদান ও নিজ অর্থায়নে। মোহাম্মদ কবিরুল ইসলাম জানান,এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে, যা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব প্রচেষ্টা, বিভিন্ন শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতা এবং ব্যক্তিগত অনুদান থেকে এসেছে। আমার লক্ষ্য কেবল এই বিদ্যালয়কে এগিয়ে নেওয়া নয় উল্লাপাড়া তথা সিরাজগঞ্জের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা।
শিক্ষক-অভিভাবকদের চোখে অনুপ্রেরণা:
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, সভাপতির আন্তরিকতা ও নেতৃত্বের কারণে বিদ্যালয়ে নতুন প্রাণ ফিরে এসেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেড়েছে, ফলাফল উন্নত হচ্ছে, আর শিক্ষকরা আগের তুলনায় বেশি উদ্যমী হয়ে উঠেছেন।
অভিভাবক শিল্পী খাতুন বলেন,
আমরা এখন নিয়মিতভাবে সন্তানের অগ্রগতি জানতে পারি। বিদ্যালয়ের পরিবেশও আগের তুলনায় অনেক সুন্দর হয়েছে। এছাড়া পুরো স্কুল এখন সিসি ক্যামেরার আওতায়, যা নিরাপত্তার দিক থেকেও আশাব্যঞ্জক।
একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত:
পূর্ব দেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ইতিবাচক পরিবর্তন এখন উল্লাপাড়ার অন্যান্য বিদ্যালয়ের জন্যও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, একজন দায়িত্বশীল সভাপতির সৎ প্রচেষ্টা ও মানবিক নেতৃত্ব একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চেহারা বদলে দিতে পারে। পূর্ব দেলুয়া উচ্চ বিদ্যালয় তারই জীবন্ত উদাহরণ।
Comments