চাঁদপুরে নদীতে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় হতাশায় ডুবছে জেলেরা

শুধুমাত্র ইলিশ মাছের প্রজনন রক্ষায় মা ইলিশকে নদীতে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে চাঁদপুরের হাইমচরের চরভৈরবী থেকে মতলব উত্তরের ষাটনল পর্যন্ত পদ্মা মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার নৌপথ এলাকায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় হতাশায় ডুবছে জেলেরা। তারা বলছেন, এমনিতেই নদীতে মাছ পাই না, এখন আবার এতোগুলা দিন নদীতে নামতে নিষেধাজ্ঞা, আমরা খাবো কিভাবে? যদিও জেলা প্রশাসক বলছেন, এই সময়ে ৩০ কেজি চাউল তাদেরকে দেয়া হবে।
৪ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত টানা ২২ দিন নদীতে ইলিশ ধরা, পরিবহন, মজুত, বেচাকেনা ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সময় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন। শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান।
তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে বুধবার থেকেই চাঁদপুর সদরের আনন্দবাজার, লালপুর মৎস্যবাজার, আমীরাবাদ ঘাট, চর উমেদ ও রাজরাজেশ্বর ও পর্যায়ক্রমে হাইমচর ও মতলব উত্তর এবং দক্ষিণে পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করে চলেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ।
নৌ পুলিশ সুপার সৈয়দ মোশফিকুর রহমান জেলেদের উদ্দেশে বলেন, ২২ দিন ধৈর্য ধারণ করে মা ইলিশ রক্ষায় জেলে ভাইরা সক্রিয় ভূমিকা রাখলে এবং সরকার প্রদত্ত সহায়তা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিলে তারাই বড় ও অনেক অনেক ইলিশ পাবে। এর পরেও কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলেরা বলছেন, আমরা আইন মেনে দুঃখ মনে চেপে রেখে নৌকা ও জাল ফেলা বন্ধ রাখলেও অন্য জেলেরা অন্য জেলা থেকে প্রতিবার চাঁদপুরের নৌ সীমানায় ঢুকে পড়ে ইলিশ ধরে নিয়ে যায়। তাছাড়া শিশুদের জেলে বানিয়ে একদল দুষ্কৃতিকারী নদীতে নামিয়ে ইলিশ ধরাতে ব্যস্ত থাকে। আমাদের কিস্তির চাপ এবং দ্রুত সময়ে যাতে নির্ধারিত চাউল পাই ও অসাধু জেলেদের দিকে যাতে প্রশাসন খেয়াল রাখে এতটুকুই বলতে চাই।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, ইলিশের জন্যই চাঁদপুর সারা দেশে পরিচিত। মা ইলিশকে নিরাপদে ডিম ছাড়তে না দিলে ভবিষ্যতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই পদ্মা মেঘনা নদীতে মা ইলিশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু শাস্তির জন্য নয় বরং জেলেদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার জন্য। এখন যদি আমরা মা ইলিশ রক্ষা করি আগামী দিনে আরও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে এবং উপকৃত হবে জেলেরাই।
তিনি আরও বলেন, আইন অমান্য করলে মৎস্য সংরক্ষণ আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে জেলেদের সহায়তায় সরকার খাদ্য সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। চাঁদপুরের ৪৫ হাজার ৬১৫ জেলে পরিবারকে এ বছর ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে, যা গতবারের তুলনায় ৫ কেজি বেশি। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময়ে কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ, মৎস্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের যৌথ টিম প্রতিদিন নদীতে টহল দেবে। তাই আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে অসাধু জেলেদের নানা বিষয় নিয়ে। তবেই বড় বড় ও বেশি ইলিশ পাওয়া যাবে।
শিমুল অধিকারী সুমন,
Comments