আজ বিজয়া, আজ বিসর্জন; শূন্য বুকের আশায় দেবীকে বিদায়

শারদীয় দুর্গোৎসবের শেষ লগ্নে আজ সারাদেশের মতো চাঁদপুরেও উদযাপিত হয়েছে বিজয়া দশমী। একদিকে উৎসবের উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে বিদায়ের বিষাদ—এই দুইয়ের মিশ্র অনুভূতিতে ভরে উঠেছে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের হৃদয়।
২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই শুরু হয় পূজা অর্চনার শেষ আনুষ্ঠানিকতা। মণ্ডপজুড়ে চলে সিঁদুর খেলা, প্রার্থনা ও বিসর্জনের প্রস্তুতি। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে মা দুর্গার চরণে অঞ্জলি দিয়ে জানান কৃতজ্ঞতা, প্রার্থনা করেন ভবিষ্যতের মঙ্গল কামনায়।
চাঁদপুর মণ্ডপগুলোতে সকাল থেকেই উপচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে শহরের দুর্গামণ্ডপে ছিল চোখে পড়ার মতো সাজসজ্জা। মায়ের চোখে যেন স্নেহের ছায়া, আর ভক্তদের চোখে জল। ঢাকের তালে তালে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রা।
দুপুর গড়াতেই চাঁদপুরের বিভিন্ন পূজামণ্ডপ ঢাক-ঢোল, শঙ্খধ্বনি আর উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো শহর। নারী-পুরুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হতে থাকে — "আসছে বছর আবার হবে"।
বিকেলে শহরের বড় স্টেশন মোড় দিয়ে যখন প্রতিমা গঙ্গার ঘাটের দিকে এগিয়ে যায়, তখন আশেপাশের মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে চোখে জল নিয়ে। গঙ্গার পাড়ে হাজারো মানুষের ভিড়। প্রতিমা জলে ভাসানোর আগে সবাই শেষবারের মতো প্রণাম করে মা দুর্গাকে। কেউ কেউ কাঁদছেন, কেউ ছবি তুলছেন, কেউ আবার প্রার্থনায় মগ্ন।
সন্ধ্যা নাগাদ শেষ হয় বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। গঙ্গার জলে প্রতিমা ভেসে যায় ধীরে ধীরে, পেছনে পড়ে থাকে শূন্যতা আর বুকভরা ভালোবাসা।
স্থানীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় বললেন, "আমরা চেষ্টা করেছি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে পূজার প্রতিটি কর্মসূচি পালন করতে। সকল সম্প্রদায়ের মানুষের অংশগ্রহণ এই উৎসবকে আরও মহৎ করেছে।"
এবার চাঁদপুরে প্রায় ২২৪টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতায় কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
তবে, পূজার আনন্দ যত গভীরই হোক না কেন, বিদায়ের মুহূর্তটি ছিল ততটাই আবেগময়। প্রতিটি মুখে ছিল একটিই প্রার্থনা—"মা, আবার এসো।"
শারদীয়ার এই মিলনমেলায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের অংশগ্রহণ আবারও প্রমাণ করে, বাঙালির উৎসব মানেই মিলন, সৌহার্দ্য আর ভালোবাসা।
আজ বিজয়া, আজ বিসর্জন। তবু শূন্য বুক জুড়ে রয়ে যায় আশার দীপ—মা আসবেন, আবারও দেবী দশভুজা ফিরবেন বাংলার ঘরে।
Comments